শিরোনামঃ
পিআরের দাবিতে আন্দোলনকারীরা নির্বাচন বিলম্বের চেষ্টায় নেমেছে: মির্জা ফখরুল পাল্টা হামলায় ৫৮ পাক সেনা হত্যার দাবি আফগানিস্তানের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নতুন সচিব এহসানুল হক আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে লাইভ চলাকালে ফেসবুক পেজে সাইবার হামলা: চিফ প্রসিকিউটর শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় যুক্তিতর্ক শুরু ইতালির উদ্দেশে দেশ ছাড়লেন প্রধান উপদেষ্টা একা গিয়ে কী করবো, সেফ এক্সিট নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সেনাবাহিনীর পেশাদারিত্ব রক্ষায় সংশ্লিষ্ট অপরাধের সুষ্ঠু ও নির্মোহ বিচার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ: বিএনপির বিবৃতি আর কোনো সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পরিকল্পনা নেই : প্রেস সচিব পরোয়ানা জারি হওয়া ১৫ সেনা কর্মকর্তা হেফাজতে: সেনাবাহিনী
সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ১১:১২ পূর্বাহ্ন

ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই নির্বাচন, স্পষ্ট বার্তা দিলেন প্রধান উপদেষ্টা

বিশেষ প্রতিবেদক
প্রকাশ: রবিবার, ৩১ আগস্ট, ২০২৫
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করেছে মালয়েশিয়ার কেবাংসান ইউনিভার্সিটি।

ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে রাজনৈতিক দলগুলোকে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

আগামী জাতীয় নির্বাচন ও সমসাময়িক বিষয় নিয়ে বিএনপি, জামায়াতে ইসলাম ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাদের সঙ্গে আলাদাভাবে বৈঠকে এ বার্তা দেন প্রধান উপদেষ্টা।

রোববার (৩১ আগস্ট) বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

তিনি জানান, বৈঠকে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের প্রধান উপদেষ্টা আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টা স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, জাতির উদ্দেশ্যে তার দেয়া ভাষণে নির্বাচনের যে সময় ঘোষণা করেছেন সেই সময়েই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর পরিবেশে জাতীয় নির্বাচন হবে। সব দলকে প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন নিয়ে তার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
শফিকুল আলম আরও জানান, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, নির্বাচন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। কেউ যদি নির্বাচন ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প ভাবেন, তা জাতির জন্য হবে গভীর বিপজ্জনক।
তিনি বলেন, বৈঠকের মাঝে ঐকমত্য কমিশনের প্রধান আলী রীয়াজ জুলাই সনদ নিয়ে অগ্রগতি জানিয়েছেন।
 
দুর্গাপূজা ঘিরে কোনো অস্থিতিশীল পরিবেশ যাতে কেউ সৃষ্টি না করতে পারে, রাজনৈতিক দলগুলোর সহায়তা চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা, বলেন শফিকুল আলম।

জাতীয় পার্টি নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর বক্তব্য প্রধান উপদেষ্টা শুনেছেন।
 
বিএনপির বক্তব্য
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে নির্বাচন নিয়ে কোনো সংশয় নেই বলে জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
 
তিনি বলেন, নির্বাচন সঠিক সময়ে হবে, এ বিষয়ে সংশয় নেই। প্রধান উপদেষ্টাও তাই বলেছেন। আর দেশের সবচেয়ে বড় দলের প্রধানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা দেখা করতেই পারেন।
এ সময় গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের ওপর হামলার বিষয়েও কথা বলেন বিএনপির মহাসচিব।
 
তিনি বলেন, হামলার বিষয়টি একটি গর্হিত কাজ। আমাদের আশঙ্কা, নির্বাচনকে বিলম্বিত করার চেষ্টা হচ্ছে, তবে তার সুযোগ নেই।
 
এনসিপির বক্তব্য
বৈঠকের বিষয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব জানান, অভ্যুত্থানের এক বছর পরেও পুনর্বাসন, নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়নি। নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানানো হয়েছে। অভ্যুত্থানে অংশ নেয়া প্রবাসীদের আইনি সহায়তা দেয়ার দাবি জানানো হয়েছে। গুম কমিশনের প্রতিবেদন আমলে নিয়ে রাষ্ট্রীয় সংস্থার যারা যুক্ত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। রাষ্ট্রীয় সংস্থা নির্বাচন প্রভাবিত করেছে। তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলা হয়েছে।
 
নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা এবং নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে প্রধান উপদেষ্টাকে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে জানিয়ে আদীব বলেন, জুলাই সনদের আইনি এবং সাংবিধানিক ভিত্তির জন্য গণপরিষদ নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে এনসিপি।

জাতীয় পার্টির বিষয়ে তিনি বলেন, বিগত ৩টি অবৈধ নির্বাচনকে বৈধতা দিতে জাতীয় পার্টি অংশ নিয়েছিল। তাদের পোস্টারেও আওয়ামী মনোনীত প্রার্থী লেখা ছিল। আওয়ামী লীগ এবং জাতীয় পার্টির মধ্যে পার্থক্য নেই। জাতীয় পার্টির কার্যক্রম স্থগিত করার জন্য পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানিয়েছে এনসিপি।

১০০ আসনে যাতে সরাসরি নারীরা নির্বাচন করতে পারে, তা নিশ্চিতের আহ্বান জানানো হয়েছে উল্লেখ করে এনসিপির এই নেতা বলেন, ফেব্রুয়ারিতে যাদের ১৮ বছর পূর্ণ হবে, তারাও যাতে ভোট দিতে পারে, তা নিশ্চিতের আহ্বান জানানো হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু করতে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে এনসিপি। 
 
জামায়াতের বক্তব্য
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার সামনে ব্রিফ করেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।
তিনি জানান, নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করার জন্য করণীয়, বানচালের ষড়যন্ত্র মোকাবিলা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা ৩ বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছেন। সংস্কার, বিচার এবং সুষ্ঠু নির্বাচন।
 
তাহের বলেন, একটা নীলনকশার নির্বাচনের দিকে যাচ্ছি কিনা, এমন প্রশ্ন উঠেছে। লন্ডনে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা এটি একটি নজিরবিহীন ঘটনা। সরকারের নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন হয়েছে। পরিকল্পিত নির্বাচন হলে গণতন্ত্রকামী মানুষদের পক্ষে নির্বাচনে অংশ নেয়া সংকুচিত হয়ে যাবে। 
 
নির্বাচনের তারিখের ব্যাপারে দ্বিমত নেই, দ্বিধাদ্বন্দ্ব নেই জানিয়ে তিনি বলেন, তবে নির্বাচনের কার্যকারিতার ব্যাপারে ভিন্নমত পোষণ করেছি। 

ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করা ৩১টি দলের মধ্যে ২৫টি দল পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চায় জানিয়ে তিনি বলেন, কেউ শুধু উচ্চকক্ষে চায়, জামায়াতসহ অনেকে উভয়কক্ষে পিআর চায়। কেন্দ্র দখল ঠেকাতে এই নতুন পদ্ধতিতে নির্বাচন জরুরি। মেজরিটিকে অবজ্ঞা করে কারো চাপে নির্বাচনে গেলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে। আমাদের জন্য নির্বাচনে যাওয়া সংকুচিত হয়ে যাবে।

দুয়েকটি দল জুলাই সনদ বাস্তবায়নে বাধা দিচ্ছে অভিযোগ করে তাহের বলেন, প্রধান উপদেষ্টার কাছে আইনি ভিত্তির দাবি জানিয়েছে জামায়াত। জুলাই সনদের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। বাস্তবায়ন না হলে জুলাই শহীদদের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে। 

এই সরকার দখলদারদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি জানিয়ে তিনি বলেন, আগে এক গ্রুপ বাসস্ট্যান্ড দখলে নিয়েছে। এখন আরেক গ্রুপ নিয়েছে। এই সরকার কীভাবে নির্বাচন করবে, তা নিয়ে শঙ্কিত, কিছুটা উদ্বিগ্ন। মনে হচ্ছে, সরকার হাত পা ছেড়ে দিয়েছে। সরকারকে এখন আরও কঠোর হতে হবে। এখনো এর থেকে উত্তরণ ঘটানো সম্ভব। 

জুলাই সনদ নিয়ে একটি দলই বাধা দিচ্ছে ‍উল্লেখ করে তাহের বলেন, জুলাই সনদ, পিআর নিয়ে জনগণের কাছে যাওয়া উচিত। তারা গণভোটে সিদ্ধান্ত নেবে। সরকারের উচিৎ স্টেকদের সাথে আলাপ আলোচনা করে নির্বাচন নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া। রাজনৈতিক দলগুলোকেও নিজেদের মধ্যে আলোচনা করা উচিৎ। 

নুরুল হক নুরের ওপর হামলার ঘটনায় দোষীদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, নুরের ওপর হামলার ষড়যন্ত্র গভীরে। সবার বিচার হতে হবে। 

আওয়ামী লীগের সহযোগী হিসেবে জাতীয় পার্টি কাজ করেছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের ব্যপারে যে সিদ্ধান্ত সরকার নিয়েছে, জাতীয় পার্টির ব্যাপারেও একই সিদ্ধান্ত নিতে পারে। 

বৈঠকে ফ্যাসিবাদের দালালদের প্রশাসন থেকে সরানোর দাবি জানানো হয়েছে বলে জানান তিনি।


এ জাতীয় আরো খবর...