গাজা উপত্যকা যেন এক রক্তক্ষয়ী কবরস্থানে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিনই লাশের মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে, হাসপাতালে ঠাঁই নেই আহতদের, আর ধ্বংসস্তূপের নিচে পড়ে আছে অসংখ্য প্রাণহীন দেহ। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যুদ্ধবিরতি ও মানবিক করিডোরের আহ্বান উঠলেও বাস্তবে ফিলিস্তিনিদের জন্য অপেক্ষা করছে আরও মৃত্যু ও ক্ষুধা যন্ত্রণা।
বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৭০টি মৃতদেহ হাসপাতালে আনা হয়েছে এবং আহত হয়েছেন ৩৫৬ জন। এ নিয়ে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের গণহত্যার যুদ্ধে নিহত হয়েছেন অন্তত ৬২ হাজার ১৯২ জন ফিলিস্তিনি। এছাড়া হামলায় মোট আহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫৭ হাজার ১১৪ জনে।
মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, অনেক ভুক্তভোগী এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় পড়ে আছেন। উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে না পারায় নিহতের প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।
মানবিক সাহায্য সংগ্রহের সময়ও ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলি হামলার শিকার হচ্ছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় সাহায্য চাইতে গিয়ে নিহত হয়েছেন ১৮ জন এবং আহত হয়েছেন ১১৭ জনেরও বেশি। ফলে ২৭ মে থেকে এ পর্যন্ত সাহায্য চাইতে গিয়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৩৬ জনে, আহত হয়েছেন ১৫ হাজার ৬৪ জনেরও বেশি। এ ছাড়া অনাহার ও অপুষ্টিতে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। এখন পর্যন্ত দুর্ভিক্ষে ১১২ শিশুসহ মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৭১ জনে।
গত ১৮ মার্চ ইসরায়েলি সেনাবাহিনী পুনরায় গাজায় আক্রমণ শুরু করে, যা জানুয়ারিতে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি ও বন্দী বিনিময় চুক্তি ভেঙে দেয়। সেই সময় থেকে এখন পর্যন্ত ১০ হাজার ৬৪৬ জন নিহত এবং ৪৫ হাজার ৭৩ জন আহত হয়েছেন।
এদিকে আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি গোয়েন্দাদের নথি অনুযায়ী, ২০২৫ সালের ১৯ মে পর্যন্ত গাজায় নিহত ৮ হাজার ৯০০ জন ছিলেন হামাস ও ইসলামিক জিহাদের যোদ্ধা। অন্যদিকে, সে সময় পর্যন্ত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, নিহতের সংখ্যা ৫৩ হাজার। তুলনা করলে দেখা যায়, মোট নিহতের মধ্যে মাত্র ১৭ শতাংশ যোদ্ধা আর বাকি ৮৩ শতাংশই সাধারণ বেসামরিক মানুষ।
বিশ্লেষকদের মতে, সিরিয়া ও সুদানের ভয়াবহ গৃহযুদ্ধেও এত সংখ্যক বেসামরিক মানুষ নিহত হয়নি। গণহত্যা বিশেষজ্ঞ, আইনজীবী, মানবাধিকারকর্মী এমনকি ইসরায়েলি শিক্ষাবিদরাও একে গণহত্যা বলে আখ্যা দিয়েছেন। তবে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী তাদের নিজস্ব গোয়েন্দা ডাটাবেজের তথ্য অস্বীকার করেছে।