ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) গাজা শহরের কেন্দ্রস্থলের দিকে দুই দিক থেকে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেছে। গত মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া এই স্থল অভিযানে আইডিএফের ১৬২তম ও ৯৮তম ডিভিশন শহরের পূর্বাঞ্চলীয় জেইতুন এলাকা এবং উত্তর-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চল থেকে একযোগে অগ্রসর হচ্ছে। এর ফলে শহরের ভেতরে তীব্র লড়াই শুরু হয়েছে এবং ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর প্রবল প্রতিরোধের মুখে পড়েছে ইসরায়েলি সেনারা।
ইসরায়েলি সামরিক কর্মকর্তাদের মতে, এই অভিযানের মূল লক্ষ্য হল হামাসের প্রধান শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত গাজা শহরের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া। আইডিএফ জানিয়েছে, তাদের সেনারা ধীরে ধীরে এবং সতর্কতার সাথে অগ্রসর হচ্ছে। এই পর্যায়টিকে তারা “অনুসন্ধানমূলক” হিসেবে অভিহিত করেছে, যেখানে মূল উদ্দেশ্য শহরের কেন্দ্রস্থলে সরাসরি হামলা চালানোর পরিবর্তে বিভিন্ন প্রবেশপথ সুরক্ষিত করা।
অভিযানের সাথে সাথে ইসরায়েলি বাহিনী ব্যাপক বিমান হামলা ও গোলাবর্ষণ অব্যাহত রেখেছে। এতে শহরের বিভিন্ন অংশে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের খবর পাওয়া যাচ্ছে এবং হতাহতের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। অতিরিক্ত জনবহুল এলাকাগুলোর ওপর চালানো হামলায় আতঙ্ক ও ভয় ছড়িয়ে পড়েছে। মানুষ জীবন বাঁচাতে দৌড়ে পালাচ্ছেন।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত কয়েকদিনের হামলায় কয়েকশ ফিলিস্তিনি নিহত এবং আরও অনেকে আহত হয়েছেন। তবে নিহতের মধ্যে বেসামরিক নাগরিক ও সশস্ত্র যোদ্ধার সংখ্যা আলাদাভাবে করা হয়নি।
এই অভিযানের ফলে গাজা শহরে ভয়াবহ মানবিক সংকট তৈরি হয়েছে। লাখ লাখ বাসিন্দা শহরের ভেতরে আটকা পড়েছেন। ইসরায়েলি বাহিনী বেসামরিক নাগরিকদের শহর ছেড়ে দক্ষিণে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিলেও, অবিরাম গোলাবর্ষণের কারণে পালিয়ে যাওয়া অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। উপরন্তু, দক্ষিণাঞ্চলে পর্যাপ্ত আশ্রয় ও খাবারের ব্যবস্থা না থাকায় অনেকেই শহর ছাড়তে পারছেন না। জাতিসংঘ এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা উত্তর গাজায় খাদ্য ও চিকিৎসা সামগ্রীর সরবরাহ প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। সম্প্রতি পুরো গাজায় ইন্টারনেট ও টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই অভিযান নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার আহ্বান জানিয়েছেন এবং অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। অপরদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন পশ্চিমা দেশ ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারের কথা বললেও, বেসামরিক হতাহতের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, গাজা শহরের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া ইসরায়েলের জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদী এবং কঠিন সামরিক চ্যালেঞ্জ হবে। পরিবেশে যুদ্ধের জটিলতা এবং হামাসের প্রতিরোধ ক্ষমতা এই অভিযানকে আরও রক্তক্ষয়ী করে তুলতে পারে বলে তারা আশঙ্কা করছেন। এই পরিস্থিতিতে, গাজা শহরের ভবিষ্যত এবং সেখানকার বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তা এক গভীর অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।