জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের সময় জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ৮৬৪ জন রোগী ভর্তি ছিল। তাদের কেউ মেটালিক পিলেট কিংবা রিয়েল বুলেট দ্বারা আঘাতপ্রাপ্ত ছিল। ফলে তাদের চোখের কর্নিয়া ছিদ্র হয়ে গিয়েছিল বলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিয়েছেন হাসপাতালের রেটিনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জাকিয়া সুলতানা নীলা।
গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের বিরুদ্ধে অষ্টম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। সোমবার সকালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন বিচারিক প্যানেলে এ সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। আজ চারজন সাক্ষীর জবানবন্দি নেয়া হবে বলে জানা গেছে।
জবানবন্দিতে নীলা ট্রাইব্যুনালকে বলেন, ‘আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ১৮ জুলাই কেউ এক চোখ, আবার কেউ দুই চোখে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে হাসপাতালে আসছিলো। তাদের চোখ গুলিবিদ্ধ ছিল। পরদিন ১৯ জুলাই সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ১০টি টেবিলে তাদের অস্ত্রোপচার হয়। কারো কর্নিয়া ছিদ্র হয়েছিল, কারো ক্লেরা (চোখের সাদা অংশ) ছিদ্র হয়ে গিয়েছিল, কারো চোখ ফেটে গিয়েছিল। তারা সবাই মেটালিক পিলেট কিংবা রিয়েল বুলেট দ্বারা আঘাতপ্রাপ্ত ছিলো। চক্ষু বিজ্ঞান হাসপাতালে ৮৬৪ জন রোগী ভর্তি হয়েছিল। তাদের মধ্যে ৫০৪ জনের ইমারজেন্সি অপারেশন এবং ২৩৮ জনের রেটিনা অপারেশন হয়েছিল বলে জানান তিনি।
এদিকে, আরেক সাক্ষীর জবানবন্দিতে রাজধানীর রামপুরার ব্যবসায়ী মো. ইদ্রিস জানান, তার ছেলে মারুফ হোসেন গত বছরের ১৯ জুলাই ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে গুলিবিদ্ধ হয়। প্রথমে তাকে রামপুরার এ.এম.জেড হাসপাতালে নেয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার সময় রামপুরা ব্রিজের ওপরে পুলিশ, বিজিবি, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীরা বাধা দেয়।
তিনি বলেন, ‘এ সময় গুলিবিদ্ধ মারুফের শরীরে রাইফেলের বাট দিয়ে এক পুলিশ সদস্য খুঁচিয়ে বলেন, সে মারা গিয়েছে তাকে আর হাসপাতালে নেয়ার দরকার নেই।’ কিন্তু এ সময় মারুফ যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলো এবং বেঁচে ছিলো বলে জানান তার পিতা। পরে অনেক অনুরোধের পর তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।