শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:২৩ অপরাহ্ন

ঐতিহাসিক জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষরিত

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২৫

দীর্ঘ আট মাসের সংলাপ ও মতৈক্য প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে চূড়ান্ত হওয়া ঐতিহাসিক ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ স্বাক্ষরিত হয়েছে।

শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) বিকেল ৫টা ৫ মিনিটে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে এটি স্বাক্ষরিত হয়।

রাজনৈতিক দলগুলোর স্বাক্ষরের পর প্রধান উপদেষ্টা এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।

তবে স্বাক্ষর অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে দিনভর উত্তেজনা, মতভিন্নতা এবং জুলাই যোদ্ধাদের বিক্ষোভের কারণে এক মিশ্র পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।

সনদ স্বাক্ষরের আগেই আজ সকালে সংসদ ভবন এলাকায় ‘জুলাই যোদ্ধাদের’ সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সনদ প্রণয়নে নিজেদের অবমূল্যায়ন ও আইনি ভিত্তি না থাকার অভিযোগ তুলে তারা মূল মঞ্চের সামনে অবস্থান নিলে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়। এই সংঘর্ষে আহত হন বেশ কয়েকজন যোদ্ধা।

তবে এই উত্তেজনার মধ্যেই ঐকমত্য কমিশন জরুরি ভিত্তিতে ‘জুলাই জাতীয় সনদ’-এর অঙ্গীকারনামার ৫নং দফায় সংশোধন আনে। কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ সংশোধিত দফায় গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা, আহতদের সহায়তা এবং শহীদ পরিবার ও আহত যোদ্ধাদের আইনগত দায়মুক্তি নিশ্চিত করার অঙ্গীকার ঘোষণা করেন।

 
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের উদ্যোগে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নানা পর্যায়ে আলোচনার মাধ্যমে এ সনদ প্রণয়ন করা হয়। পরবর্তীতে খসড়াটি পরিমার্জনের জন্য দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হয়।

গত বুধবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের চূড়ান্ত বৈঠকে অংশ নেন প্রধান উপদেষ্টা।

জুলাই সনদ প্রণয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জানানো হয়েছে, ৪০ পৃষ্ঠার এই নথিতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে— যেখানে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমল, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন এবং ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান উল্লেখ রয়েছে।
এই সনদে ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ এবং ১৯৭৫ সালে সাংবিধানিক সংশোধনীর মাধ্যমে একদলীয় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।

সনদে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘বিভিন্ন রাজনৈতিক ঘটনাবলির পর ১৯৭৮ সালে বহুদলীয় ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনের মাধ্যমে শুরু হওয়া ১৯৭৯ সালের সংসদীয় নির্বাচনের মাধ্যমে দেশ গণতন্ত্রে ফিরে আসে। তবে, সেই গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা স্বল্পস্থায়ী ছিল।’

সনদে আরো তুলে ধরা হয়েছে, ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে নির্দিষ্ট ব্যক্তি, পরিবার এবং গোষ্ঠীর পক্ষে স্বৈরাচারী অনুশীলনের আধিপত্য ছিল।

এই সনদে ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের টানা তিনটি বিতর্কিত নির্বাচনের সমালোচনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এগুলো নির্বাচন ব্যবস্থাকে দুর্বল করেছে, বিচার বিভাগ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণ করেছে এবং দুর্নীতিকে সহজতর করেছে।
এই সনদে গত ১৬ বছরের ধারাবাহিক গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রতিফলনও দেখা গেছে। যার মধ্যে রয়েছে ২০১৮ সালের সড়ক নিরাপত্তা আন্দোলন, কোটা বিরোধী আন্দোলন এবং ছাত্র-জনতার নেতৃত্বাধীন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন এবং ২০২৪ সালের জুলাই মাসে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক গণঅভ্যুত্থানে পরিণতি লাভ করে।

অবশেষে, এই সনদে একটি সাত দফা প্রতিশ্রুতি রয়েছে, যেখানে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের এটিতে সই করার এবং গণতান্ত্রিক নীতি এবং জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে ২০২৪ সালের জুলাইয়ের বিদ্রোহে প্রকাশিত জনগণের ইচ্ছাকে সমুন্নত রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে।


এ জাতীয় আরো খবর...