পুলিশের সঙ্গে জুলাই যোদ্ধাদের সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে ঢাকার মানিক মিয়া এভিনিউ এলাকা। শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) দুপুর ১টার দিকে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের মঞ্চের সামনে থেকে জুলাই যোদ্ধাদের সরিয়ে দিতে গেলে এ সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
ওই সময় সংঘর্ষ চলাকালে কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুরের পাশাপাশি ইটপাটকেল নিক্ষেপ ছাড়াও বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। সেই সঙ্গে কয়েকটি জায়গায় আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) রাত থেকেই জুলাই সনদ সংশোধনসহ ৩ দফা দাবিতে সংসদ ভবন এলাকায় অবস্থান করছিলেন জুলাই যোদ্ধারা। শুক্রবারও দাবি আদায়ে ‘জুলাই শহিদ পরিবার ও আহত যোদ্ধা’র ব্যানারে শতাধিক মানুষ জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ‘জুলাই সনদ ২০২৫’ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানস্থলে অবস্থান নেন।
পরবর্তীতে দুপুর সোয়া ১টার দিকে মঞ্চের সামনে থেকে জুলাই যোদ্ধাদের সরিয়ে দেয় পুলিশ। ওই সময় কয়েকজনকে লাঠিপেটাও করতে দেখা যায়। এ ঘটনায় জুলাই যোদ্ধাদের কয়েকজন আহত হলে তাদের হাসপাতালে নিতে দেখা যায়। একপর্যায়ে জুলাই যোদ্ধারা অনুষ্ঠানস্থলের বাইরে এসে বিক্ষোভের পাশাপাশি কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুর করে। একই সময় একদল ব্যক্তি আবারও মঞ্চের দিকে ঢুকে গেলে পুলিশ ফের তাদের সরিয়ে দেয়।
থমথমে এই পরিস্থিতির মধ্যেই মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের কয়েকটি জায়গায় আগুন জ্বলতে দেখা যায়। সেই সঙ্গে সংসদ ভবন সংলগ্ন আসাদগেট এলাকায় কয়েকটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। পরবর্তীতে দুপুর আড়াইটার দিকে ধানমন্ডি বয়েজ স্কুলের সামনের রাস্তা দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীদের একটি দলকে খামারবাড়ি মোড়ের দিকে এবং আরেকটি দলকে আসাদ গেটের দিকে সরিয়ে দেয় পুলিশ। পরবর্তীতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সদস্যরা মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে অবস্থান নেয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার মো. শহীদুল্লাহ দুপুরে গণমাধ্যমকে জানান, বিক্ষোভের একপর্যায়ে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ ছাড়াও পুলিশের ওপর হামলা করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশের ৫টি যানবাহন ভাঙচুর করে বিক্ষোভকারীরা। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়।
এদিকে শুক্রবার বিকেল ৪টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে সরকার। বিএনপি, জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার কথা জানালেও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) বৃহস্পতিবারই ঘোষণা দিয়েছে তারা জুলাই সনদ সই করবে না। এছাড়াও জুলাই জাতীয় সনদের স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আগে সংশোধিত খসড়া না পেলে সনদে সই না করার কথা জানিয়েছে বাম ধারার চারটি দল। এই দলগুলো হলো- বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাসদ (মার্ক্সবাদী) ও বাংলাদেশ জাসদ।
অন্যদিকে ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ এর অঙ্গীকারনামার ৫ নম্বর দফা সংশোধন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। শুক্রবার আন্দোলনরত জুলাই যোদ্ধাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, জুলাই বীর যোদ্ধাদের সঙ্গে গতকালের আলোচনা ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ এর অঙ্গীকারনামার ৫ নম্বর দফার পরিবর্তন করা হয়েছে৷ এর মাধ্যমে জুলাই বীর যোদ্ধাদের দাবির প্রতিফলন ঘটিয়ে প্রয়োজনীয় জরুরি সংশোধন করা হয়েছে।