‘অভ্যুত্থানের এক বছর পার হয়েছে। অনেক হিসাব-নিকাশ করেছি। আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়নি। গত এক বছরে জাতীয় নাগরিক পার্টি ছাড় দিয়েছে। এখন আর ছাড় দেবে না। জুলাই সনদের যে উদ্দেশ্য তা প্রতিষ্ঠা করেই নির্বাচনে অংশ নেব।’ মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে (কেআইবি) জাতীয় যুব সম্মেলন ২০২৫- এ এসব কথা বলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
তিনি আরও বলেন, জাতীয় প্রতিরক্ষার অংশ হিসেবে তরুণদের গড়ে তুলতে হবে। তাদের সামরিকভাবে ট্রেনিং করতে হবে। বাংলাদেশের গণপ্রতিরক্ষার অংশীদার করতে হবে। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য তরুণদের সবসময়ের জন্য প্রস্তুত করে রাখতে হবে।
নাহিদ ইসলাম বলেন, এখন এই তারুণ্যের যে শক্তি, গণঅভ্যুত্থানের পরে যে শক্তি বাংলাদেশের তরুণদের মধ্যে এখনো রয়েছে, সেই শক্তিকে আমরা কতটুকু কাজে লাগাব, এই রাষ্ট্র কতটুকু কাজে লাগাবে, সেই সিদ্ধান্ত আমাদেরকেই নিতে হবে। আমরা যে প্রতিশ্রুতি, যেই ওয়াদা দেশের তরুণদের প্রতি, জনগণের প্রতি দিয়েছি, ইনশাল্লাহ সেই ওয়াদা আমরা পালন করব।
তিনি বলেন, সারা দেশে জাতীয় যুবশক্তির আলোড়ন তৈরি হয়েছে। আমরা জুলাই পদযাত্রার মধ্য দিয়ে এটি দেখেছি। জুলাই পদযাত্রায় সারা দেশের প্রায় প্রত্যেকটি জেলায় জাতীয় যুবশক্তির সংগঠকরা আমাদের সহযোগিতা করেছেন। তরুণদেরকে জুলাই পদযাত্রায় নিয়ে এসেছে।
২৪-এর গণঅভ্যুত্থানকে ব্যর্থ করতে সব ধরনের আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে মন্তব্য করে নাহিদ ইসলাম বলেন, সমীকরণ এখনও শেষ হয়নি। যারা এখনই সমীকরণ মিলিয়ে ফেলছে, তারা ভুল পথে হাঁটছে। গত এক বছর ছাড় দিয়েছি, জুলাই ঘোষণাপত্রে ছাড় দিয়েছি, জুলাই সনদে এক শতাংশও ছাড় দেয়া হবে না।
নিজেদের মধ্যে ঐক্য ধরে রাখতে না পারলে আরেকটি ১/১১ আসবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, নির্বাচন চাই। তবে পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। জুলাই সনদে একবিন্দুও ছাড় দেয়া হবে না। প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন না হলে কোনও রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় যেতে পারবে না।
এদিকে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে হবে না বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। ১২ আগস্ট (মঙ্গলবার) বিকেলে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশে (কেআইবি) ‘জাতীয় যুব সম্মেলন ২০২৫’-এ তিনি এসব কথা বলেন। এনসিপির যুব সংগঠন জাতীয় যুবশক্তি আয়োজিত এ সম্মেলনে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বক্তব্য রাখেন।
সম্মেলনে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, যদি ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হয়, আমার যে ভাইয়েরা শহীদ হয়েছিল, রক্ত দিয়েছিল সংস্কারের জন্য, তাহলে কবরে গিয়ে তার লাশটা ফেরত দিতে হবে এই সরকারকে। আমার যে ভাইয়ের হাতটা চলে গিয়েছিল, যদি সংস্কার কাজ শেষ না করে নির্বাচন হয়, তাহলে এই সরকারকে আমার ভাইয়ের হাতটা ফিরিয়ে দিতে হবে। যে মায়ের বুক খালি হয়েছিল, ওই মায়ের বুকের সন্তানকে ফেরত দিতে হবে। একই ধরনের সংস্কৃতিতে নির্বাচন হলে মানুষ কেন আহত-নিহত হল সে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, একই সংস্কৃতির ডামাডোলে, একই ফ্যাসিবাদী সংবিধানে, একই সিস্টেমের মধ্য দিয়ে আমরা নির্বাচনে যাচ্ছি। তাহলে এতগুলো মানুষ শহীদ হবার প্রয়োজন কি ছিল? এতগুলো মানুষ আহত হবার প্রয়োজন কি ছিল? সংবাদমাধ্যমের সমালোচনা করে নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী বলেন, গণমাধ্যম আগে ছিল ‘হাসিনামাধ্যম’, এখন কি মাধ্যম সেটা বললে চাকরি থাকবে না। গণ-অভ্যুত্থানের পরে সকল মিডিয়ার সম্পাদকদের সঙ্গে বসেছিলাম, তাদেরকে একটা কথা বলেছিলাম, যা আকাম করেছেন, ঘরের ভিতরে বসে থাকেন। যদি লজ্জা থাকে, ঘরের ভেতর থেকে বের হবেন না। কিন্তু তাদের লজ্জা নাই। তারা বারবার বাংলাদেশের মানুষদের ধোঁকা দিয়ে যাচ্ছে।
আয়নাঘর ও একটি গোয়েন্দা সংস্থার কাজের সমালোচনা করে নাসীরুদ্দীন বলেন, একটা গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশে-ডিজিএফআই আপনার আমার পকেটের টাকায় চলাফেরা করে। তারা কত টাকা খরচ করে বাংলাদেশের মানুষ জানতে পারবে না। তাদের কোনো দায়িত্ববোধ নাই, জবাবদিহি নাই, স্বচ্ছতা নাই। তাদের একটাই কাজ, মানুষকে ভীতি প্রদর্শন করে কিছু হলেই আয়নাঘরে তুলে নিয়ে আসব। আপনার আয়নাঘর আমরা ভেঙে দিয়েছি। সামনে যদি একই ধরনের প্রচেষ্টা করা হয়, আমরা আয়নাঘর কেন, ডিজিএফআইয়ের হেডকোয়ার্টার আমরা ভেঙে দেব। যথেষ্ট সহ্য করেছি। বাংলাদেশ যদি ডিজিএফআই থাকতে হয়, অবশ্যই এটার সংস্কার করতে হবে। সম্মেলনে এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারা, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, জাতীয় যুবশক্তির সদস্য সচিব জাহেদুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন।