শিরোনামঃ
পিআরের দাবিতে আন্দোলনকারীরা নির্বাচন বিলম্বের চেষ্টায় নেমেছে: মির্জা ফখরুল পাল্টা হামলায় ৫৮ পাক সেনা হত্যার দাবি আফগানিস্তানের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নতুন সচিব এহসানুল হক আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে লাইভ চলাকালে ফেসবুক পেজে সাইবার হামলা: চিফ প্রসিকিউটর শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় যুক্তিতর্ক শুরু ইতালির উদ্দেশে দেশ ছাড়লেন প্রধান উপদেষ্টা একা গিয়ে কী করবো, সেফ এক্সিট নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সেনাবাহিনীর পেশাদারিত্ব রক্ষায় সংশ্লিষ্ট অপরাধের সুষ্ঠু ও নির্মোহ বিচার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ: বিএনপির বিবৃতি আর কোনো সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পরিকল্পনা নেই : প্রেস সচিব পরোয়ানা জারি হওয়া ১৫ সেনা কর্মকর্তা হেফাজতে: সেনাবাহিনী
সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ০১:৩৪ অপরাহ্ন

সীমান্তে ৫ বছরে বিএসএফের হাতে নিহত হয়েছে ১৫৮ বাংলাদেশি

বিশেষ প্রতিবেদক
প্রকাশ: সোমবার, ২৫ আগস্ট, ২০২৫

ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ সদস্যদের হাতে গেল পাঁচ বছরে দেশের বিভিন্ন সীমান্তে অন্তত ১৫৮ জন বাংলাদেশি প্রাণ হারিয়েছেন। যদিও এ সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। এ সময়ে গুলি ও নির্যাতনে আহত হয়েছেন অন্তত ১২৭ জন, আর অপহরণেন পর আর হদিস মিলেনি ৪৮ বাংলাদেশির।

সব শেষ বিএসএফের হাতে মারা যান ফেনীর পরশুরাম উপজেলার বাসিন্দা মিল্লাত হোসেন (২১)। বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) রাতে উপজেলার বাঁশপদুয়া সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে নিহত হন তিনি। অন্যদিকে গত ১২ জুলাই সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলা এবং ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার সীমান্ত এলাকায় শফিকুল ইসলাম (৪৫), মো. রাসেল (২০) নামে দুই বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যা করে বিএসএফ।

এছাড়াও মৌলভীবাজারের কুলাউড়া সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে প্রাণ হারান প্রদীপ বৈদ্য (২২) নামের এক বাংলাদেশি তরুণ। শুধু মিল্লাত, শফিকুল, মো. রাসেল নয় গত ৫ বছরে বিএসএফের গুলিতে এবং শারীরিক নির্যাতনে নিহত হয়েছেন অন্তত ১৫৮ জন বাংলাদেশি।

মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পরিসংখ্যান বলছে, ২০২০ সাল থেকে চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে এবং শারীরিক নির্যাতনে নিহত হয়েছেন ১৫৮ জন বাংলাদেশি। গুরুতর আহত হয়েছেন ১২৭ জন। এ ছাড়াও অপহরণের শিকার হয়েছেন ৪৮ জন।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এসব হত্যাকাণ্ড ঠেকাতে সীমান্তবর্তী এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জোরদার আরও বাড়াতে হবে। এছাড়াও সীমান্তে চোরাচালানের সঙ্গে যদি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ জড়িত থাকে তাহলে তাদেরকে আইনের আওতায় এনে দ্রুত শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

আসকের পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, ২০২০ সালে বিএসএফের গুলিতে নিহত হন অন্তত ৪৯ জন বাংলাদেশি। এ বছর আহত হন ২৬ জন এবং অপহরণের শিকার হয়েছেন ২২ জন বাংলাদেশি। ২০২১ সালে হত্যা কিছুটা কমে আসে। ওই বছর নিহত হয় ১৬ জন। আহত হন ৮ জন এবং অপহরণ হন ৩ জন।

২০২২ সালে ১৮ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়াও আহত হয়েছেন ১৩ জন এবং অপহরণ হয় ৮ জন। ২০২৩ সালে বিএসএফের গুলিতে নিহত হন ২৩ জন এবং আহত হন ২৩ জন। ২০২৪ সালে নিহত হন ৩০ জন। আহত হন ২৫ এবং অপহরণ ৩ জন। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ২২। আহত হয়েছেন ৩২ এবং অপহরণ হয়েছেন ১২ জন।

বাংলাদেশ যদি ঘুরে দাঁড়ায় তাহলে বিএসএফ বাংলাদেশিদের ওপর হত্যাকাণ্ড চালাতে পারবে না বলে মন্তব্য করেন রাষ্ট্র বিজ্ঞানিরা। যারা ভৌগলিকভাবে বড় তারা সাধারণত ছোটদের অবহেলা করে। বাংলাদেশ তার সার্বভৌমত্ব ও অস্তিত্বে ছাড় দিতে পারবে না বলেই ভারত আমাদের দুর্বলতার সুযোগ পেয়েছে। যেমন- নেপালকে ভারত আগের মতো শোষণ করতে পারে না, মালদ্বীপকে পারে না। তেমনি বাংলাদেশও যদি ঘুরে দাঁড়ায় তাহলে আর পারবে না।

অনেক সমাজ বিজ্ঞানির মতে, বাংলাদেশের ওপর ভারতের যে আধিপত্য ছিল সেটা ২০২৪ সালের গত ৫ আগস্টের পর একেবারে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। সরকারের উচিত ভারতের এই সহিংস আচরণের প্রতিবাদ করা। কারণ, প্রতিবাদ না করলে তারা প্রশ্রয় পেয়ে যাবে। এর আগে প্রতিবাদ করেনি বলে তারা এখনও এটা চালিয়ে যাচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচিত এটার প্রতিবাদ করা।

সীমান্তে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে আরও টহল বৃদ্ধি করা উচিত বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মকে, সীমান্তে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য আমাদের যারা নিরাপত্তারক্ষী আছে যেমন- বিজিবি, পুলিশ, নৌবাহিনী বা বিভিন্ন ধরনের রেঞ্জ পুলিশ আছে তারা দায়িত্ব পালন করে তাদের টহল বৃদ্ধি করতে হবে। সীমান্তে অনিয়মের সঙ্গে যদি কোনও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য জড়িত থাকে তাদেরকে চিহ্নিত করে দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে। যারা চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত থাকে এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে লিয়াজু করে অপরাধ করে তাদের খুঁজে বের করতে হবে, তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, সীমান্তবর্তী এলাকায় যারা বসবাস করে তাদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বসা উচিত। বসে তারা কী কী ধরনের সেবা চায়, নিরাপত্তা বাহিনীর কাছ থেকে কী কী সাপোর্ট চাচ্ছে- সেটা তাদের কাছ থেকে শোনার পরিপ্রেক্ষিতে সেখানে পুলিশিংটা নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে বর্ডার এলাকায় অপরাধ, অন্যায়, অনিয়ম ধীরে ধীরে প্রতিহত করা সম্ভব হবে।


এ জাতীয় আরো খবর...