স্ত্রী ব্রিজিত মাখোঁ যে একজন নারী, তা প্রমাণে যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালতে যাচ্ছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ। সেখানে ব্রিজিতকে নারী প্রমাণের জন্য প্রয়োজনীয় সব বৈজ্ঞানিক প্রমাণ ও আলোকচিত্র আদালতে উপস্থাপনের পরিকল্পনা করছেন করছেন এ দম্পতি।
জানা গেছে, পদক্ষেপটি তারা নিয়েছেন একজন প্রভাবশালী মার্কিন ডানপন্থী ব্যক্তিত্ব ক্যান্ডেস ওয়েন্সের বিরুদ্ধে। ২০২৪ সালের মার্চ মাসে প্রথমবার ওয়েন্স প্রকাশ্যে দাবি করেন, ব্রিজিত মাখোঁ ‘আসলে একজন পুরুষ। সে সময় তিনি বলেন, ‘এ দাবির পেছনে আমি আমার পুরো পেশাগত ক্যারিয়ারের সুনাম বাজি রাখছি।’
এরপর ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে তিনি একটি আট-পর্বের পডকাস্ট সিরিজ প্রকাশ করেন, যেখানে তিনি মাখোঁ দম্পতির ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক জীবন নিয়ে নানান বিতর্কিত ও ভিত্তিহীন দাবি তুলে ধরেন।
এ ধারাবাহিক প্রচারণার ফলেই মাখোঁ দম্পতি ২০২৫ সালের জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্রে ওয়েন্সের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেন।
যুক্তরাষ্ট্রে বিখ্যাত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করতে হলে প্রমাণ করতে হয়, অভিযুক্ত ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়েছেন অথবা সত্যকে অবজ্ঞা করে মিথ্যা তথ্য প্রকাশ করেছেন।
এর অংশ হিসেবে আদালতে বিশেষজ্ঞদের সাক্ষ্য উপস্থাপন করার পাশাপাশি ব্রিজিতের গর্ভবতী অবস্থার ছবি ও সন্তানদের লালন-পালনের প্রমাণও উপস্থাপন করা হবে।
তবে এ পুরো আইনি প্রক্রিয়াকে ‘ব্যক্তিগতভাবে অস্বস্তিকর’ বলে মনে করেন ব্রিজিত। তিনি জানান, ‘যদি এ অস্বস্তি ও আত্মউন্মোচনই সত্য প্রতিষ্ঠার পথ হয়, তাহলে আমি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ সে বোঝা বহন করতে।’
মাখোঁ দম্পতির আইনজীবী টম ক্লেয়ার বলেন, ‘এ অভিযোগ ব্রিজিতের জন্য অত্যন্ত কষ্টদায়ক এবং প্রেসিডেন্টের জন্যও এটি একটি বিভ্রান্তিকর বিষয়। যখন আপনার পরিবার আক্রমণের শিকার হয়, তখন সেটি আপনার ওপর প্রভাব ফেলে—যদি আপনি যদি একটি দেশের প্রেসিডেন্টও হন।’
তিনি আরও জানান, ‘আদালতে বৈজ্ঞানিক প্রকৃতির বিশেষজ্ঞ সাক্ষ্য উপস্থাপন করা হবে এবং দম্পতি সম্পূর্ণভাবে প্রমাণ করতে প্রস্তুত যে এ অভিযোগ মিথ্যা।’
তবে, ওয়েন্সের আইনজীবীরা মামলাটি খারিজের আবেদন করেছেন। তাদের মতে, মামলাটি ডেলাওয়ারের আদালতের দায়ের করা অনুচিত হয়েছে। এর কারণ হিসেবে তারা বলছেন, তাদের মক্কেল বসবাস করেন টেনেসি রাজ্যে। সেখানে মামলার বিচার হলে অর্থনৈতিক ও পরিচালনাগতভাবে গুরুতর ক্ষতি হবেন তিনি।
এ মামলার পেছনে দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে যার সূত্রপাত ২০২১ সালে দুজন ফরাসি ব্লগারের একটি ইউটিউব ভিডিও থেকে। ফ্রান্সে এ অভিযোগের বিরুদ্ধে মাখোঁ দম্পতি একটি মামলা জিতেছিলেন। যদিও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ভিত্তিতে পরে আপিলে রায়টি বাতিল হয়। কিন্তু সত্যের ভিত্তিতে মাখোঁ দম্পতি আবার আপিল করেছেন।
ইমানুয়েল মাখোঁ ফরাসি ম্যাগাজিন ‘প্যারিস ম্যাচ’-এ বলেন, ‘এটি আমার সম্মান রক্ষার বিষয়। এটি এমন একজনের কাজ, যিনি জানতেন তার তথ্য মিথ্যা এবং তা ছড়িয়েছেন উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে, একটি মতাদর্শের সেবায় এবং চিহ্নিত কট্টর ডানপন্থী নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে।’
সব মিলিয়ে মামলাটি শুধু একটি ব্যক্তিগত লড়াই নয়, বরং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বনাম তথ্যের সত্যতা নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। সূত্র: বিবিসি।