সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের ঢাকার গুলশানের বাসায় চাঁদাবাজির ঘটনায় অভিযুক্ত বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক জানে আলম অপুর স্বীকারোক্তিমূলক বক্তব্যে স্থানীয় সরকার বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার নাম এসেছে। জানে আলম অপুর দেয়া ওই বক্তেব্যের ভিডিও গতকাল বুধবার (১৩ আগস্ট) রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের কাছে সাংবাদিকরা মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বললেন, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে, তাই এ নিয়ে বেশি মন্তব্য করা উচিত না। আসলে আমার নামটা আসার পর আমি অবাক-ই হই। জানে আলম অপুকে চিনতাম, যখন আমি ছাত্র অধিকার পরিষদে ছিলাম, ২০২২ সালে। ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলাম তখন, সে-ও ছাত্র অধিকার পরিষদ করতো। সে সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটিতে ছিল বোধয়। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর তার সাথে আমার কখনও দেখা হয়নি।
স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আরও বলছিলেন, এই ধরনের একটি অভিযোগ আসার পর আবার আরেক জায়গা থেকে জানতে পারলাম, স্ত্রী পরিচয়ে একজন সংবাদ সম্মেলন করেছেন, সেখানে তিনি বলেছেন অপুকে গুম করে নিয়ে গিয়ে জোরপূর্বক বক্তব্য নেয়া হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গেস্টরুমে এগুলো হতো, আমাদের এখানে আয়নাঘর ছিল, ৫ আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের পর এগুলো অকার্যকর। আবারও সেই প্র্যাকটিসের দিকে যাচ্ছি কি না! একটা শঙ্কার বিষয় আছে!
আরও পড়ুন: নির্বাচন করার ইচ্ছা আছে, এনসিপি’র হয়ে করবো কি-না সিদ্ধান্ত নেইনি: আসিফ মাহমুদ
বলতে বলতে তিনি ভোরের দিকে বাইরে খেতে যাওয়ার প্রসঙ্গও আনেন। আসিফ মাহমুদের ভাষ্য, রাতে মাঝে মধ্যে কাজ শেষ করতে কখনও কখনও ভোর হয়ে যায়, ওই সময় খাবার দেয়ার জন্য বাসায় কেউ থাকে না। বেশিরভাগ সময় তখন তিনি ৩০০ ফিটের নীলা মার্কেটে যান। ওখানে খুব ভালো হাঁসের মাংস পাওয়া যায়। ৪-৫ জন মিলে সেখানে যান। আবার ভোর হয়ে গেলে সেখানে দোকান বন্ধ থাকে। তখন গুলশানের হোটেল ওয়েস্টিনে যাওয়া হয়।
তবে জানে আলম অপু তার বক্তব্যে যেদিন আসিফ মাহমুদ গুলশানে গিয়েছিলেন এবং দুইজনের দেখা হয়েছিল বলে দাবি করেছেন, সেদিন ওখানে গিয়েছিলেন কি না খেয়াল নেই এই উপদেষ্টার।
এরপর সাংবাদিকেরা স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার কাছে জানতে চান, সিসিটিভি ফুটেজে দেখা মোটরসাইকেলে করে যাওয়া ব্যক্তি কি তিনি-ই ছিলেন?
আসিফ মাহমুদ জবাব দেন, সিসিটিভি ফুটেজে হেলমেট পরা যে কাউকে যদি আমাকে বলে দাবি করা হয়, এটা কতটুকু বিশ্বাসযোগ্য? আমি এ বিষয়ে আর বেশি কিছু বলতে চাই না। তদন্তাধীন বিষয় যেহেতু।
তিনি দাবি করেন, এই ঘটনায় তার কোনও সম্পৃক্ততা নেই। যার সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে, তাকে একজন নেতার বাসায় জোরপূর্বক বক্তব্য নেয়া হয়েছে।
এদিকে, কমিশন যে আগামী জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবেন, তার আগেই সরকার থেকে পদত্যাগ করবেন এলজিআরডি উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। তিনি বলেন, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে আলোচনা করে নেবেন।
বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন তিনি। বলেন, ‘সরকারে থেকে কারোই নির্বাচন করা উচিত নয়। হয়ত পরিচিতির কারণে আমার (আসিফ) ও তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজের কথা বেশি আসছে। কিন্তু বর্তমান সরকারে আরও অনেকে আছেন, যাদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ছিল বা আছে। তারাও ভোট করলেও তফসিলের আগে পদত্যাগ করা উচিত।’
এনসিপিতে যোগ দেবেন কিনা, এমন প্রশ্নেরও জবাব দেন তিনি। বলেন, ‘এনসিপিতেই যোগ দেব, এটা ধরে নেওয়া উচিত হবে না। এটা পরে বিবেচনা করব।’
প্রধান উপদেষ্টার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে আসিফ মাহমুদ বলেন, যেহেতু সরকারের পক্ষ থেকে বার বার বলা হচ্ছে সর্বকালের সেরা একটা নির্বাচন উপহার দিতে চায়, তাই সেটা হতেই হবে। আর যদি সেটা করা না যায়, সে ঐতিহাসিক দায় সবার ওপরই বর্তাবে।
কুমিল্লা থেকে নির্বাচন করবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সে বিষয়েও এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেননি।