শিরোনামঃ
পিআরের দাবিতে আন্দোলনকারীরা নির্বাচন বিলম্বের চেষ্টায় নেমেছে: মির্জা ফখরুল পাল্টা হামলায় ৫৮ পাক সেনা হত্যার দাবি আফগানিস্তানের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নতুন সচিব এহসানুল হক আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে লাইভ চলাকালে ফেসবুক পেজে সাইবার হামলা: চিফ প্রসিকিউটর শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় যুক্তিতর্ক শুরু ইতালির উদ্দেশে দেশ ছাড়লেন প্রধান উপদেষ্টা একা গিয়ে কী করবো, সেফ এক্সিট নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সেনাবাহিনীর পেশাদারিত্ব রক্ষায় সংশ্লিষ্ট অপরাধের সুষ্ঠু ও নির্মোহ বিচার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ: বিএনপির বিবৃতি আর কোনো সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পরিকল্পনা নেই : প্রেস সচিব পরোয়ানা জারি হওয়া ১৫ সেনা কর্মকর্তা হেফাজতে: সেনাবাহিনী
রবিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:১৪ অপরাহ্ন

ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন: ফেনীর তিন আসনে জটিল সমিকরণ

এ কে এম ফজলুল হক
প্রকাশ: শনিবার, ১৯ জুলাই, ২০২৫

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ফেনীতে সম্ভাব্য প্রার্থীদের অনেকটা ছড়াছড়ি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলে। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পিতৃভূমি হওয়ায় সবসময় ধানেরশীষের আধিপত্য। প্রার্থী হলেই জয়, এমন ভাবনা থেকে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীর সংখ্যা বাড়তেই আছে। বিপরীতে মাঠে সক্রিয় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর একক প্রার্থীরা। আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), খেলাফত মজলিস ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এখনো জেলা কমিটিই গঠন করতে পারেনি জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।

ফেনীর তিনটি আসনই বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। তবে এখন পর্যন্ত সারাদেশের মতোই এ জেলায়ও প্রার্থী ঘোষণা দেয়নি দলটি। তবুও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা ঈদুল ফিতর ও আজহার পর সম্প্রতি বন্যায় নানা কর্মকাণ্ডে জানান দেন পুরোদমে ভোটে প্রস্তুত তারা। সাধারণ মানুষের মাঝে চলছে পক্ষে-বিপক্ষে নানা আলোচনা। দীর্ঘদিনের ভোটারবিহীন নির্বাচনের বাইরে এসে আগামী নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়ে উঠবে—এমন প্রত্যাশা তাদের।

ফেনী-১ (ছাগলনাইয়া-ফুলগাজী-পরশুরাম):

ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলা নিয়ে ফেনী-২ আসন। দেশের জাতীয় রাজনৈতিক নেতৃত্ব, ভৌগোলিক অবস্থান এবং নানা কারণে ফেনীর সীমান্তবর্তী তিন উপজেলা নিয়ে গঠিত ফেনী-১ আসনটি জাতীয় সংসদের গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। ১৯৭৩ সালের পর থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে পারেননি। বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এই আসন থেকে বিজয়ী হয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এরই মধ্যে তিনবার প্রধানমন্ত্রী ও দুবার বিরোধীদলীয় নেত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন।

এবার আসনটিতে খালেদা জিয়াকেই প্রার্থী চান দলটির তৃণমূল নেতাকর্মী ও স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে দলীয় সূত্র জানায়, শারীরিক কারণে বেগম জিয়া নির্বাচন করতে সক্ষম না হলে এখানে দলটির সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে পুত্রবধূ সৈয়দা শামীলা রহমান প্রার্থী হতে পারেন। এছাড়া বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির গ্রামসরকারবিষয়ক সহ-সম্পাদক বেলাল আহমেদ, বেগম জিয়ার ছোট ভাই সাবেক এমপি প্রয়াত সাঈদ ইস্কান্দারের ছেলে ব্যারিস্টার শামস ইস্কান্দারের নামও শোনা যাচ্ছে। এ আসন থেকে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনুও। ২০১৮ সালে এ আসনে ধানেল শীষের প্রার্থী ছিলেন তিনি।

এদিকে এ আসনে জামায়াতের পক্ষ থেকে একক প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন দলটির কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য অ্যাড. কালাম আহমেদ। এ ছাড়া বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের (মামুনুল হক) জেলা সভাপতি মাওলানা নাজমুল আলম এবং খেলাফত মজলিসের জেলা যুগ্ম আহবায়ক মাওলানা আবদুল আজিজ আহমদীকে নিজ নিজ দলের একক প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে দলটির জেলা কমিটির উপদেষ্টা ফরিদ উদ্দিন আল মোবারককে এখনো দলটির পক্ষ থেকে প্রার্থী ঘোষণা দেওয়া হতে পারে।

স্থানীয়দের মতে ফেনী-১ আসনে ধানের শীষ প্রতিকের প্রার্থীই জয়ী হবে। তবে আগের চেয়ে ভোট বৃদ্ধি পেতে পারে জামায়াতের। ভোটের হিসেব পাল্টে দিকে পারে আওয়ামী লীগের অবস্থান।

ফেনী-২ (সদর):

ফেনী-২ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন পেতে পারেন দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও তিনবারের সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন (ভিপি জয়নাল)। এ ছাড়া দলটির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য জিয়া উদ্দিন মিস্টার, মশিউর রহমান বিপ্লব, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ ফরিদ বাহার, সদস্যসচিব আলাল উদ্দিন আলাল, যুগ্ম আহ্বায়ক গাজী হাবীব উল্যাহ মানিক মনোয়ন প্রত্যাশী। সব হিসেব-নিকেশ শেষে ভিপি জয়নালের পাল্লাই ভারী বলে মনে করেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা।

এদিকে আসনটিতে দলীয় একক প্রার্থী ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটির কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও সাবেক জেলা আমীর অধ্যাপক লিয়াকত ভূইয়াকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

এ ছাড়া এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা সেক্রেটারি মাওলানা একরামুল হক ভূঁইয়া এই আসন থেকে প্রার্থিতার বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছেন।

অন্যদিকে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস (মামুনুল হক) কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক মাওলানা হারুনুর রশিদ ভূইয়া ও খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান ফয়সলকে দলীয় একক প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

 

ফেনী-৩ (দাগনভূঞা-সোনাগাজী):

ফেনী- ৩ আসনটির সীমানা ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ছিল সোনাগাজী উপজেলা ও ফেনী সদর উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন নিয়ে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনের সীমানা পরিবর্তন হয়ে ফেনী- ২ আসন থেকে দাগনভূঞাকে কেটে ফেনী- ৩ আসনে সংযুক্ত করা হয়েছে। বর্তমানে এ আসন দাঁড়িয়েছে সোনাগাজী উপজেলার একটি পৌরসভা, নয়টি ইউনিয়ন ও দাগনভূঞা উপজেলার একটি পৌরসভা ও আটটি ইউনিয়ন নিয়ে।

১৯৯১ সাল থেকে পরপর পাঁচবার বিএনপি সমর্থিত (ধানের শীষ প্রতীকের) প্রার্থী এই আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে বিএনপির ভোট বর্জনের সুযোগও কাজে লাগাতে পারেনি আওয়ামী লীগ। সে নির্বাচনে ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী ছিলেন লাঙ্গল প্রতিকের জাতীয় পার্টির নেতা রিন্টু আনোয়ার। নির্বাচনী পরিবেশ ঘোলাটে থাকায় তিনি ভোট বর্জন করলে এমপি নির্বাচিত হন স্বতন্ত্র প্রার্থী রহিম উল্যাহ। অবশ্য পরে রাজনীতি ছেড়ে দেন রিন্টু। ২০১৮ ও ২০২৪ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও নির্বাচনী মাঠে ছিলেন না তিনি। সে হিসেবে রিন্টুকে একবার সংসদে দেখতে চান অনেকে। ২০১৮ সালে বিএনপি নির্বাচনে গেলেও আগের রাতে ভোটের কাছে হেরে যান ধানের শীষের প্রার্থী আকবর হোসেন। সে নির্বাচনে জাতীয় পার্টি থেকে ১৪ দলের প্রার্থী হয়ে এমপি হন লে. জেনারেল (অব:)মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী। ২০২৪ এর নির্বাচনে ডামি প্রার্থী করিয়ে আগের রাতে ভোটগ্রহণ করে জয়ী হন মাসুদ।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুকে প্রার্থী হিসেবে দেখতে চান তৃণমূল নেতা-কর্মীদের অনেকেই। এ ছাড়া দলটির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে আছেন মিন্টুর ছোট ভাই ২০১৮ সালের নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থী দাগনভূঞা উপজেলা বিএনপির আহবায়ক আকবর হোসেন। তিনি দাগনভূঞা পৌরসভার সাবেক মেয়র, এছাড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ভোট করলেও আওয়ামী লীগের কেন্দ্র দখলের কাছে হেরে জয়ী হতে পারেননি। দলীয় ছাড়াও দুই উপজেলায় শিক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নানা অবদানের ফল হিসেবে এ আসনের ভোটাররা মিন্টু পরিবারের একজনকে সংসদে দেখতে চান স্থানীয়রা। সে ক্ষেত্রে আবদুল আউয়াল মিন্টু প্রার্থী না হলে আকবর হোসেনকেই ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে দেখতে চান স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এছাড়া বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল লতিফ জনি, মহিলা দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. শাহানা আক্তার শানু, সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত মোশাররফ হোসেনের ভাই মোয়াজ্জেম হোসেনের ছেলে ব্যবসায়ী মাবরুর হোসাইন মনোনয়নপ্রত্যাশী।

আসনটিতে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে একক প্রার্থী হিসেবে জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরে সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ডা. ফখরুদ্দিন মানিক এলাকায় প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন।

এ ছাড়া জেএসডির (রব) কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের (মামুনুল হক) কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা এনামুল হক মূসা, খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা মোহাম্মদ আলি মিল্লাতকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

অন্যদিকে ইসলামী আন্দোলনের চট্টগ্রাম মহানগরের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক সাইফুদ্দিন শিপনকে এখানে দলটির প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হতে পারে বলে জানা গেছে।

জেলার তিনটি আসনে নির্বাচনের বিষয়ে জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আলাল উদ্দিন আলাল জানান, ফেনী বিএনপির ঘাঁটি। দল থেকে যাকেই প্রার্থী দেবে তার জন্য নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন বলেও জানান তিনি।

ফেনী ধানের শীষ প্রতিকের দূর্গ হিসেবে পরিচিত দাবি করে দলটির নেতারা বলছেন, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আশা করেন তারা। অভ্যন্তরীণ কোন্দল আছে এমনটি মনে করেন না বেশিরভাগ নেতা, তাদের মতে বড় দলে পদ নিয়ে মান-অভিমান থাকতেই পারে। পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হলে বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের মধ্যে ভুলবোঝাবুঝি দূর হয়ে যাবে বলেও মনে করেন তারা।

জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা মুফতি আবদুল হান্নান বলেন, ফেনীর তিনটি আসনেই একক প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। প্রার্থীরা প্রতিনিয়ত সভা-সমাবেশ করে মানুষের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন। এতে তিনজনই ব্যাপক সাড়াও পাচ্ছেন।

আর সারা দেশের মতো ফেনীর মানুষও দীর্ঘদিন ভোটাধিকার বঞ্চিত উল্লেখ করে জুলাই বিপ্লবের পর মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে বলে জানান পেশাজীবিরা।


এ জাতীয় আরো খবর...