বাংলাদেশে গত তিন বছরে দারিদ্র্যের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭ দশমিক ৯৩ শতাংশে। ২০২২ সালে এ হার ছিল ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ। সোমবার (২৫ আগস্ট) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এলজিইডি মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) এ তথ্য তুলে ধরে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় করা ‘ইকনোমিক ডায়নামিকস অ্যান্ড মুড অ্যাট হাউজহোল্ড লেভেল ইন মিড ২০২৫’ শীর্ষক এই গবেষণা মে মাসে দেশের আট হাজার ৬৭টি পরিবারের ৩৩ হাজারের বেশি মানুষের তথ্যের ভিত্তিতে করা হয়।
গত তিন বছরের ব্যবধানে শহরের একটি পরিবারের মাসিক আয় কমেছে কিন্তু খরচ বেড়ে গেছে বলে পিপিআরসির গবেষণায় পাওয়া গেছে। শহরের একটি পরিবারের গড়ে মাসিক আয় ৪০ হাজার ৫৭৮ টাকা, কিন্তু খরচ দাঁড়িয়েছে ৪৪ হাজার ৯৬১ টাকা। অথচ ২০২২ সালে শহরের একটি পরিবারের মাসিক গড় আয় ছিল ৪৫ হাজার ৫৭৮ টাকা।
অন্যদিকে গ্রামের পরিবারের গড় আয় কিছুটা বেড়েছে। গ্রামের একটি পরিবারের গড় আয় ২৯ হাজার ২০৫ টাকা যেখানে খরচ ২৭ হাজার ১৬২ টাকা। ২০২২ সালে গ্রামের পরিবারের গড় আয় ছিল ২৬ হাজার ১৬৩ টাকা।
দরিদ্রের বাইরে এখন দেশের ১৮ শতাংশ পরিবার হঠাৎ দুর্যোগে যেকোনো সময় দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। তিন বছরে অতি বা চরম দারিদ্র্যের হারও বেড়েছে। ২০২২ সালের অতি দারিদ্র্যের হার ছিল ৫ দশমিক ৬ শতাংশ, যা ২০২৫ সালে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশে।
যদিও গড় আয়ের এ চিত্র দেখে দরিদ্র মানুষের প্রকৃত অবস্থা বোঝা যায় না। পিপিআরসির জরিপে উঠে এসেছে, দেশের সবচেয়ে নিচে থাকা ১০ শতাংশ পরিবারের মাসিক আয় মাত্র ৮ হাজার ৪৭৭ টাকা, যেখানে শীর্ষ ১০ শতাংশ পরিবারের আয় ১ লাখ ৯ হাজার ৩৯০ টাকা। এ চিত্রে ধনী-গরিবের আয়বৈষম্য প্রকটভাবে ধরা পড়েছে।
নতুন পাঁচ ঝুঁকি
পিপিআরসি জানায়, বর্তমান বাস্তবতায় দারিদ্র্য বৃদ্ধির পেছনে পাঁচটি নতুন ঝুঁকি কাজ করছে। সেগুলো হলো—
১. দীর্ঘস্থায়ী (ক্রনিক) রোগের বোঝা : দেশের ৫১ শতাংশ পরিবারে অন্তত একজন বা এর বেশি সংখ্যায় উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত সদস্য রয়েছেন।
২. নারীপ্রধান পরিবারের ভঙ্গুর অবস্থা : দেশের প্রায় প্রতি চারটি দরিদ্র পরিবারের মধ্যে একটি নারীপ্রধান (স্বামীর মৃত্যু অথবা বিচ্ছেদ বড় কারণ)। এ ধরনের পরিবারগুলো সমাজের সবচেয়ে নিচের স্তরে পড়ে আছে। তাই এদের জন্য বিশেষ সহায়তা প্রয়োজন।
৩. ঋণের চাপ বৃদ্ধি : সমাজের একটি অংশ অনেক বেশি আয় করছে, অন্যদিকে বড় অংশ খরচ চালাতেই হিমশিম খাচ্ছে। এর ফলে পরিবারগুলোর ওপর ঋণের চাপ বাড়ছে, বিশেষ করে দরিদ্র পরিবারে চাপ বেশি। এই ঋণ মূলত নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনার ব্যয়, চিকিৎসা কিংবা ঘর মেরামতের মতো কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। নিম্ন আয়ের মানুষেরা সবচেয়ে বেশি ঋণ করছেন দৈনন্দিন খাবারের খরচ মেটানোর জন্য।
৪. খাদ্যনিরাপত্তাহীনতা : ক্রমবর্ধমান খাদ্যনিরাপত্তাহীনতা আরেকটি বড় ঝুঁকি। পিপিআরসির গবেষণায় দেখা যায়, দেশের সবচেয়ে দরিদ্র অনেক পরিবারের সদস্যরা সপ্তাহে একাধিক বেলা কিংবা মাসে অন্তত এক দিন একেবারেই না খেয়ে থাকছেন।
৫. স্যানিটেশন সংকট : স্যানিটেশন সংকট উত্তরণ করে এসডিজি (জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য) অর্জনের জন্য মাত্র পাঁচ বছর আছে, কিন্তু এখনো প্রায় ৩৬ শতাংশ মানুষ নন-স্যানিটারি টয়লেট (শৌচাগার) ব্যবহার করছেন।
বিবিএসের ২০২২ সালের জনশুমারি অনুযায়ী, দেশের জনসংখ্যা ছিল ১৬ কোটি ৯৮ লাখ। তখন পরিবারের সংখ্যা ছিল ৪ কোটি ১০ লাখ। সে হিসেবে বর্তমানে কমপক্ষে পৌনে পাঁচ কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। তিন বছরে জনসংখ্যাও বেড়েছে।