কোনো দল যখন মনে করে যে পাঁচ বছর পর ক্ষমতা হারাতে হতে পারে, তখন তারা ভয়ে হলেও খারাপ কাজ কম করে। কিন্তু যখন সেই ভয়টাই চলে যায়, তখন তারা দানবে পরিণত হয় বলে মন্তব্য করেছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। শনিবার (২৬ জুলাই) সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস) আয়োজিত ১১তম মানবাধিকার সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের বিগত শাসনামলে আমরা দেখেছি, ক্ষমতা হারানোর ভয় না থাকলে একটি দল কীভাবে দানবে পরিণত হয়। যার পরিণতিতে হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে, অনেকেই পঙ্গু হয়েছেন, অসংখ্য পরিবার ধ্বংস হয়ে গেছে।’
আসিফ নজরুল বলেন, ‘মানবাধিকার নিশ্চিত করতে হলে রাষ্ট্রের তিনটি প্রধান অঙ্গ- নির্বাহী, আইন ও বিচার বিভাগে সংস্কার আনতে হবে। এই তিন জায়গায় সমস্যা রেখে মানবাধিকার সুরক্ষা সম্ভব নয়। শুধু নতুন আইন তৈরি করলেই হবে না, বাস্তব কাঠামোয় হাত দিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘১৯৯১ থেকে ২০১১-১২ সাল পর্যন্ত দেশে মোটামুটি ভালো নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সরকার এসেছিল। যার কারণে আমরা কিছুটা হলেও ভালোর দিকে যাত্রা শুরু করেছিলাম। শেখ হাসিনার শাসনামলে ২০১৩ সালের সময়েও অনেকগুলো মেয়র নির্বাচনে অন্য দলের প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছিলেন। তখন পর্যন্ত স্বচ্ছতা ছিল।’
সভায় আরও বক্তব্য দেন এইচআরএসএস-এর চেয়ারপারসন শাহজাদা আল আমিন, মানবাধিকারকর্মী ও সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা মো. নূর খান, জাতিসংঘ আবাসিক সমন্বয়কারীর কার্যালয়ের (ইউএনআরসিও) জ্যেষ্ঠ মানবাধিকার উপদেষ্টা হুমা খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোহাম্মদ একরামুল হক, ব্লাস্ট-এর নির্বাহী পরিচালক সারা হোসেন এবং ঢাবির শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষক সাইফুদ্দিন আহমেদ।
মানবাধিকারকর্মী নূর খান বলেন, ‘জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের এক বছর হতে চলেছে। কিন্তু আগের ফ্যাসিস্ট শক্তির যেসব কাজ আমরা সমালোচনা করতাম, এখন নিজেদের ভেতরেই সেগুলোর ছায়া দেখা যাচ্ছে। এটা থামাতে না পারলে গণতন্ত্র শেষ হয়ে যাবে।’
সারা হোসেন বলেন, ‘এখন দুইটি কাজ সবচেয়ে জরুরি। এক-মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচার নিশ্চিত করা। দুই-ভবিষ্যতে কেন এমন লঙ্ঘন হয়, সেই কাঠামোগত কারণ চিহ্নিত করে তা প্রতিরোধ করা।’