ভারতের কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চল ‘লাদাখ’কে রাজ্যের মর্যাদা এবং ষষ্ঠ তফসিলের আওতায় অন্তর্ভুক্তির দাবিতে রাজধানী ‘লেহ’তে বিক্ষোভকারীদের আন্দোলন সহিংসতার রূপ নিয়েছে। আর এতে কমপক্ষে চারজন নিহত এবং অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে একাধিক পুলিশ কর্মীও রয়েছেন। বুধবার এই ঘটনার পরই লেহ’এর জেলাশাসক শহরজুড়ে কারফিউ জারি করে পাঁচজনের বেশি মানুষের জমায়েত নিষিদ্ধ করেন।
বিক্ষোভের সময় উত্তেজিত বিক্ষোভকারীরা স্থানীয় বিজেপি’র অফিসে আগুন ধরিয়ে দেন এবং একটি গাড়িতেও আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। ফলে সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে বিক্ষোভকারীদের ওপর কাঁদানে গ্যাস এবং লাঠিপেটা করতে বাধ্য হয় পুলিশ।
শহরজুড়ে অস্থিরতার পর, লেহ’এর জেলাশাসক রোমিল সিং ডঙ্ক’ এর সই করা একটি সরকারি নির্দেশিকায় বলা হয়, ইউনিয়ন প্রশাসন ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা (বিএনএনএস), ২০২৩-এর ১৬৩ ধারার অধীনে কারফিউ জারি করে, লেহ-তে বিক্ষোভ ও সমাবেশ অবিলম্বে নিষিদ্ধ করে। এর অর্থ লেহ’তে পাঁচ বা তার বেশি লোকের সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে, পূর্ব লিখিত অনুমোদন ছাড়া কোনও মিছিল, সমাবেশ বা পদযাত্রা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এদিন এই আন্দোলনের ডাক দিয়েছিল ‘লেহ অ্যাপেক্স বডি (এলএবি) এর যুব শাখা। এই আন্দোলনটি লাদাখকে রাজ্যের মর্যাদা এবং সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলের অধীনে অন্তর্ভুক্তির দাবিতে চলমান প্রচারণার অংশ ছিল।
লাদাখের অ্যাপেক্স বডির সভাপতি থুপস্তান সোয়াং জানান ‘আমরা লাদাখের চারটি বিষয় নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে এখানে আন্দোলন চালিয়ে আসছি। বুধবার কিছু ঘটনা ঘটেছে যার ফলে সহিংসতা ঘটেছে। এই সহিংসতার সময়, আমাদের স্বার্থ রক্ষা করতেই আমাদের আন্দোলনের ২-৩ জন যুবক শহিদ হয়েছেন। আমি লাদাখের জনগণকে আশ্বস্ত করতে চাই যে আমরা আজ এই তরুণদের ত্যাগ কোনভাবেই বৃথা যেতে দেব না।’
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত লাদাখ পূর্বতন জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের অংশ ছিল। কিন্তু ওই দিন সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিলের পর লাদাখ সরাসরি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। সেসময় যারা রাজ্য থেকে বিচ্ছিন্ন করে লাদাখকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করার পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছিল, বর্তমানে তারাই এখন রাজ্যের মর্যাদা ফেরানোর দাবিতে সরব হয়ে উঠেছে।
এমনকি এই দাবিতেই জলবায়ুকর্মী সোনম ওয়াংচুকের নেতৃত্বে গত ১০ সেপ্টেম্বর থেকে অনশনে বসেন ৩৫ জন মানুষ। অনশনরত মানুষের মধ্যে দুজনকে স্বাস্থ্যের অবনতির কারণে হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। এরপরই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে আন্দোলনকারীরা। এদিন রাস্তা নেমে বিক্ষোভ জানানোর পাশাপাশি পুরো ‘লেহ’ শহরকে স্তব্ধ করে দেয়ার ডাক দেয়। একসময় আন্দোলনকারীরা পাথর ছোড়া শুরু করলেই উত্তেজনা বাড়ে, কঠোর ব্যবস্থা নেয় পুলিশ।
যদিও এদিনের এই সহিংসতার পরেই প্রত্যাহার করেন সোনম ওয়াংচুক। পরে টুইট করে তিনি লিখেন ‘শান্তির আবেদনে আমি যে বার্তা রেখেছিলাম তা ব্যর্থ হয়েছে। আমি যুব সমাজকে বলবো, এক্ষুনি যেন তারা এই সহিংসতার পথ পরিহার করেন। এই ঘটনায় আমাদের প্রকৃত উদ্দেশ্যটাই বিঘ্নিত হবে।’
সোনম ওয়াংচুক আরো জানান ‘এই ঘটনা গত ৫ বছর ধরে চলমান আমাদের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকে ব্যাহত করেছে। তরুণদের এই বিক্ষোভ কেবলমাত্র বেকারত্ব এবং অন্যান্য বৃহত্তর সমস্যার কারণে হয়েছিল। আমরা আজ জেন-জি’র উন্মাদনা দেখেছি। গত পাঁচ বছর ধরে তাদের হতাশা আমি বুঝতে পারছি, তবে আমি তাদের প্রতিবাদের পদ্ধতির নিন্দা জানাই,’ তিনি বলেন।
যদিও লাদাখের এই অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি নিয়ে সোনম ওয়াংচুককেই দায়ী করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এদিন রাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায় ‘বহু নেতা অনশন প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো সত্ত্বেও, তিনি অনশন চালিয়ে যান এবং আরব-বসন্ত ও নেপালে জেন-জি বিক্ষোভের ধাঁচে উসকানিমূলক বিক্ষোভের উল্লেখ করে জনগণকে বিভ্রান্ত করেন। তার ওই উসকানিমূলক বক্তৃতায় উদ্বুদ্ধ হয়ে একদল জনতা অনশনস্থল ত্যাগ করে এবং একটি রাজনৈতিক দলের অফিসের পাশাপাশি লেহ’তে সরকারি কার্যালয়ে হামলা চালায়। এই ঘটনায় স্পষ্ট যে সোনম ওয়াংচুক তার উসকানিমূলক বক্তব্যের মাধ্যমে জনতাকে পরিচালিত করেছিলেন।’