শিরোনামঃ
পিআরের দাবিতে আন্দোলনকারীরা নির্বাচন বিলম্বের চেষ্টায় নেমেছে: মির্জা ফখরুল পাল্টা হামলায় ৫৮ পাক সেনা হত্যার দাবি আফগানিস্তানের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নতুন সচিব এহসানুল হক আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে লাইভ চলাকালে ফেসবুক পেজে সাইবার হামলা: চিফ প্রসিকিউটর শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় যুক্তিতর্ক শুরু ইতালির উদ্দেশে দেশ ছাড়লেন প্রধান উপদেষ্টা একা গিয়ে কী করবো, সেফ এক্সিট নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সেনাবাহিনীর পেশাদারিত্ব রক্ষায় সংশ্লিষ্ট অপরাধের সুষ্ঠু ও নির্মোহ বিচার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ: বিএনপির বিবৃতি আর কোনো সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পরিকল্পনা নেই : প্রেস সচিব পরোয়ানা জারি হওয়া ১৫ সেনা কর্মকর্তা হেফাজতে: সেনাবাহিনী
রবিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৩৭ অপরাহ্ন

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে নোয়াবের বিবৃতি প্রত্যাখ্যান করেছে সরকার

বিশেষ প্রতিবেদক
প্রকাশ: শনিবার, ৯ আগস্ট, ২০২৫

দেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠন নোয়াবের পর্যবেক্ষণকে দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আজ শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘আমরা নোয়াবের সাম্প্রতিক বিবৃতি পর্যালোচনা করেছি, যেখানে তারা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও তথ্যপ্রাপ্তি নিয়ে মন্তব্য করেছে। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গত এক বছরে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বা গণমাধ্যমের স্বতন্ত্রতাকে ক্ষুণ্ন করেছে।’ আমরা দৃঢ় ও স্পষ্টভাবে এ বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করছি।’

নিচে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে প্রকাশিত বিবৃতিটি দেওয়া হলো:

 

দেশের গণমাধ্যম পরিচালনায় সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ নেই

দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কোনো গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের সম্পাদকীয়, প্রশাসনিক বা ব্যবসায়িক কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করেনি; বরং ইচ্ছাকৃত অপপ্রচার ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সম্প্রচারের মুখেও সরকার অসাধারণ সংযম দেখিয়েছে।

টেলিভিশনের টক শো ও কলামে প্রায়ই সরকারের বিরুদ্ধে অসত্য ও উসকানিমূলক বক্তব্য প্রচারিত হয়েছে, কিন্তু সরকার তা সেন্সর করেনি কিংবা প্রতিশোধ নেয়নি।

প্রচণ্ড প্ররোচনার মুখেও সরকার কোনো অভিযোগ দায়ের করেনি, লাইসেন্স বাতিল করেনি, বরং পূর্ববর্তী সরকারের জোরপূর্বক বন্ধ করে দেওয়া কিছু গণমাধ্যমকে পুনরায় প্রকাশ বা সম্প্রচারের সুযোগ করে দিয়েছে, যা স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে সরকার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও মুক্ত গণমাধ্যমে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

সরকারের সঙ্গে গণমাধ্যমের যোগাযোগ উন্মুক্ত

সীমিত যোগাযোগের অভিযোগের বিপরীতে সাংবাদিকেরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীদের সঙ্গে সরাসরি ও উন্মুক্তভাবে যোগাযোগের সুযোগ পেয়েছেন। কোনো সাংবাদিককে তাঁর গণমাধ্যম বা সম্পাদকীয় অবস্থানের কারণে সাক্ষাৎকার বা ব্রিফিং থেকে বঞ্চিত করা হয়নি।

আমরা স্বচ্ছতায় বিশ্বাস করি এবং আমাদের আচরণ সেই বিশ্বাসের প্রতিফলন।

সচিবালয় অ্যাক্রিডিটেশন প্রক্রিয়ায় সংস্কার

অ্যাক্রিডিটেশন ব্যবস্থার সংস্কারের প্রতি নোয়াবের সমালোচনা শুধু ভুলই নয়, বরং ভ্রান্ত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে করা হয়েছে। আগের ব্যবস্থা ছিল মারাত্মকভাবে আপসকৃত, যেখানে অ্যাক্রিডিটেশন এমন অনেক ব্যক্তির হাতে পৌঁছেছিল, যাঁদের বৈধ সাংবাদিকতায় কোনো ভূমিকা ছিল না; তাঁদের মধ্যে কেউ ছিলেন রাজনীতিবিদ, কেউ তদবিরবাজ আর কেউ সুযোগসন্ধানী, যাঁরা বিশেষ প্রাধিকার ব্যবহার করে অন্যায্যভাবে নীতিনির্ধারণ প্রভাবিত করতেন।

‘আমরা সেই কাঠামো ভেঙে দিয়েছি এবং একটি অস্থায়ী পাস ব্যবস্থা চালু করেছি, যাতে প্রকৃত সাংবাদিকদের সচিবালয়ে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করে। এই সংস্কার প্রবেশাধিকার সীমিত করার জন্য নয়, বরং একটি দুর্নীতিগ্রস্ত প্রক্রিয়ার সততা পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য।’

পূর্বের অ্যাক্রিডিটেশন নীতিতে সাংবাদিকদের সরকারপন্থী হতে বাধ্য করার মতো কিছু অপমানজনক ধারা ছিল, যা তাদের সাংবিধানিক অধিকারের পরিপন্থী। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সেই ধারাগুলো সংশোধন করেছে।

দীর্ঘমেয়াদি নবায়ন সময়সীমাসহ নতুন অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড ইস্যুর প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলে বিবৃতিতে জানানো হয়।

কর্মসংস্থান সুরক্ষা

যেসব সাংবাদিক চাকরি হারিয়েছেন, তা কোনো সরকারি নির্দেশে নয়; বরং গণমাধ্যমমালিকদের সম্পাদকীয় বা ব্যবসায়িক পুনর্বিন্যাসের সিদ্ধান্তের ফল। এগুলো মূলত অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক হিসাব-নিকাশ, সরকারের কোনো চাপ নয়।

সাংবাদিকদের নিরাপত্তা: যৌথ দায়িত্ব

সরকার দেশের সব নাগরিকের মতো সাংবাদিকদের শারীরিক নিরাপত্তা ও মর্যাদা রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা অগ্রাধিকার, তবে এই দায়িত্ব মিডিয়া প্রতিষ্ঠান, সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে যৌথভাবে ভাগাভাগি হওয়া উচিত।

নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিতে প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে, এ বছরের শুরুর দিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীন মিডিয়া সংস্কার কমিশন একটি নতুন ‘সাংবাদিক সুরক্ষা আইন’ প্রস্তাব করেছে, যা আইনগত সুরক্ষা বৃদ্ধি করবে এবং সরকারি বা নিরাপত্তা বাহিনীর ভয়ে সৃষ্ট আত্মনিয়ন্ত্রণ কমাবে। সরকার প্রস্তাবিত আইন প্রণয়নের কথা বিবেচনা করছে।

 

শিল্পের অভ্যন্তরীণ আত্মসমালোচনার আহ্বান

গঠনমূলক সমালোচনার প্রতি উন্মুক্ত থাকা সত্ত্বেও সরকারের পরামর্শ হচ্ছে, দায় আরোপ করার আগে নোয়াবের উচিত নিজ সংগঠনের ভেতরে নজর দেওয়া। বিশেষ করে সাংবাদিকদের মজুরিবঞ্চনা, শ্রম অধিকার থেকে বঞ্চিতকরণ, পর্যাপ্ত সুরক্ষা ছাড়া প্রতিকূল পরিবেশে কাজ করানো এবং অসহিষ্ণু কর্মপরিবেশের অভিযোগের ক্ষেত্রে নোয়াবের উচিত তাদের নিজস্ব সদস্যদের কর্মকাণ্ড খতিয়ে দেখা ও তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা।

একটি সংবেদনশীল উত্তরণকালে পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসন হিসেবে সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে হস্তক্ষেপহীন নীতি বজায় রেখেছে, যাতে গণমাধ্যম ভয় বা হস্তক্ষেপ ছাড়াই কাজ করতে পারে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আমাদের কাছে কেবল একটি ‘স্লোগান’ নয়; এটি আমাদের জীবনাচরণের নীতি।

নোয়াবের উদ্বেগগুলো যদি বাস্তব তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এবং সঠিক পক্ষকে লক্ষ্য করে করা হতো, তাহলে সেগুলো আরও বেশি গ্রহণযোগ্য হতো। ঘটনাবলির ভুল ব্যাখ্যার ভিত্তিতে সামগ্রিক অভিযোগ গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে এগিয়ে নেয় না; বরং বাংলাদেশের গণমাধ্যম অঙ্গনের প্রকৃত চ্যালেঞ্জগুলো থেকে মনোযোগ সরিয়ে দেয়।

আমরা স্বচ্ছতা, নিরাপত্তা ও স্বাধীনতার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ এবং এই মৌলিক মূল্যবোধগুলো রক্ষা ও উন্নয়নে সব পক্ষকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানাই।

 


এ জাতীয় আরো খবর...