ঘরের মাঠে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টসে হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ। চিরচেনা মাঠ, তবুও যেন ব্যাটাররা অসহায়। ব্যাটিং ব্যর্থতায় এদিনও স্কোর বড় করতে পারেনি স্বাগতিকরা। তবুও হৃদয়-অঙ্কন ও শেষদিকে রিশাদের ক্যামিওতে ২০৭ রানের সংগ্রহ পায় মিরাজের দল। জবাব দিতে নেমে শুরুটা ভালোই করেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তবে রিশাদের ঘূর্ণিতে মুহূর্তেই ভেঙে পড়ে সফরকারীদের ব্যাটিং অর্ডার। ফলে ১১ ওভার বাকি থাকতেই ১৩৩ রানে গুটিয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আর তাতেই ৭৪ রানের বড় জয়ে সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে গেলো বাংলাদেশ।
শনিবার (১৮ অক্টোবর) মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টসে জিতে বাংলাদেশকে আগে ব্যাটিংয়ে আমন্ত্রণ জানান ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক শাই হোপ। স্কোরবোর্ডে ৮ রান যোগ হতেই দুই ওপেনারকে হারায় টাইগাররা। এরপর নাজমুল হোসেন শান্ত দলের হাল ধরেন। টেস্ট মেজাজে ব্যাট করে ৬৩ বলে ৩২ রান করে বিদায় নেন তিনি। তাওহীদ হৃদয় ও মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন রান পেলেও বল খরচ করেছেন একটু বেশিই। শেষদিকে রিশাদ খেলেন ২৬ রানের ক্যামিও। বল হাতেও তিনি নেন ৬ উইকেট। ব্যাটে-বলে দুই বিভাগে অবদান রেখে জেতেন ম্যান অব দ্য মাচের পুরস্কার।
রাদারফোর্ডকেও টিকতে দেননি ডানহাতি এই লেগ স্পিনার। ৩ বল খেলে রানের খাতা খোলার আগেই রিশাদের বলে সোহানের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন রাদারফোর্ড। রোস্টন চেজ ফেরেন মাত্র ৬ রান করে। আগের ব্যাটারের মতো তিনিও আউট হন সোহানের হাতে ক্যাচ দিয়ে।
এরপর জাস্টিন গ্রেভস ছাড়া বাকিদের আর কেউই ছুঁতে পারেননি দুই অঙ্কের ঘর। শেষ পর্যন্ত ১১ ওভার বাক থাকতে ১৩৩ রানেই গুটিয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বাংলাদেশের হয়ে রিশাদ হোসেন নেন ৬ উইকেট। এ ছাড়া মোস্তাফিজুর রহমান নেন ২ উইকেট, মেহেদী হাসান মিরাজ ও তানভীর ইসলাম নেন একটি করে উইকেট।
এদিন সাইফ হাসানের সঙ্গী হয়ে সৌম্য সরকার ওপেনিংয়ে নামেন। তবে ২.১ ওভারে মাত্র ৮ রান তুলতেই দুই ওপেনারই বিদায় নেন। এশিয়া কাপ ও পরে আফগানিস্তান সিরিজে আলো কাড়া সাইফ হাসান ৩ ও এই সিরিজে দলে ফেরা সৌম্য ৪ রান করে আউট হন।
দুই ওপেনারের দ্রুত বিদায়ে ক্রিজে আসা নাজমুল হোসেন শান্ত ও তাওহীদ হৃদয় দলের হাল ধরেন। জুটি গড়লেও তারা ব্যাট করেছেন টেস্ট মেজাজে। এই জুটি থেকে আসে ৭১ রান। শান্ত ৬৩ বলে ৩২ রান করে পেইরির বলে এলবিডব্লিউ হয়ে যান। প্রথমে আম্পায়ার আউট না দিলেও রিভিউ নিয়ে সফল হন ক্যারিবীয় অধিনায়ক শাই হোপ।
শান্তর বিদায়ের পর অভিষিক্ত মাহিদুল ইসলাম অঙ্কনের সঙ্গে তাওহীদ হৃদয় ৩৬ রানের জুটি গড়তে খরচ করেছন ৭২ বল। এর মাঝে ৩০তম ওভারে এসে শতরান পূর্ণ করে টাইগাররা।
এদিন অর্ধশতক তুলে নিয়েছেন হৃদয়। গ্রেভসের বলে আউট হওয়ার আগে ৯০ বলে ৩ চারে ৫১ রান করেন তিনি। হৃদয়-অঙ্কনের পুরো জুটিতে চার হয়েছে মাত্র একটি। ম্যাচের ২১.৫ ওভার থেকে ৩৫.৩ ওভার পর্যন্ত কোনো চারই মারতে পারেনি বাংলাদেশ। ৮২ বলের এই খরা কাটে অঙ্কনের ব্যাটে। বাঁহাতি স্পিনার মোতির বলে সুইপ করে ৮২ বল পর বাউন্ডারি মারেন সদ্য অভিষিক্ত এই ব্যাটার।
অভিষেক ম্যাচেই অর্ধশতক হাঁকানোর পথে ছিলেন অঙ্কন। কিন্তু চার রান দূরে থাকতে চেজকে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যান তিনি। ৭৬ বলে ৩ চারে ৪৬ রান করেন তিনি। মিরাজ ২৭ বলে ২ চারে ১৭ ও নুরুল হাসান সোহান ১০ বলে ৯ রান করে আউট হন।
পুরো ৫০ ওভার খেলে ২০০ রান পূর্ণ করা নিয়েও শঙ্কায় ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু রিশাদ হোসেনের ঝড়ো ব্যাটিং সম্মান বাঁচিয়েছে টাইগারদের। মাত্র ১৩ বলে ১ চার ও ২ ছক্কায় ২৬ রানের দুর্দান্ত ক্যামিও খেলে আউট হন রিশাদ। দুইশ থেকে তখনও দুই রান দূরে বাংলাদেশ। শেষ ওভারের প্রথম বলে শেফার্ডকে ছক্কা মেরে মানসম্মান বাঁচান তানভীর।
তানভীর ৪ বলে ৯ রানে অপরাজিত থাকেন। মোস্তাফিজ ১ রান করে রানআউট হয়েছেন। ক্যারিবীয়দের পক্ষে জেডন সিলস ৩টি, রোস্টন চেজ ও জাস্টিন গ্রেভস ২টি এবং খারে পিয়েরে ও রোমারিও শেফার্ড ১টি করে উইকেট শিকার করেছেন।