ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা ও আংশিক স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সে চাকসু নির্বাচনে ভোট গ্রহণ হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন নিয়ে মতবিনিময় সভায় এ তথ্য জানায় কমিশন। আজ সোমবার বেলা দুইটায় সভা শুরু হয়। সেখানে ধাপে ধাপে প্রার্থীরা নিজেদের পরিচয় দিয়ে প্রশ্ন করেন এবং নির্বাচন কমিশনাররা সেসবের উত্তর দেন।
মতবিনিময় সভায় প্রচারণা ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে প্রার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা। সভায় নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে নির্বাচনে ফেস্টুন ও ব্যানার প্রচারণার জন্য ব্যবহার করা যাবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া ক্লাসরুমের ভেতরেও প্রচারণার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। তবে ক্যাম্পাসের বাইরে ভোট চাওয়া আচরণবিধির লঙ্ঘন হবে না।
ক্যাম্পাসের সমাজবিজ্ঞান অনুষদ মিলনায়তনে এই সভার আয়োজন করা হয়। শুরুতে ক্যাম্পাসে যাঁরা আচরণবিধি সম্পর্কে নজর রাখবেন, তাঁদের পরিচয় তুলে ধরেন নির্বাচন কমিশনের সদস্যসচিব এ কে এম আরিফুল হক সিদ্দিকী। পরে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রশ্ন ও মতামত চাওয়া হয়। একের পর এক প্রার্থী প্রশ্ন করা শুরু করেন।
মতবিনিময় সভায় কেন্দ্রীয় ও হল সংসদ নির্বাচনের প্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। ছাত্রশিবির–সমর্থিত সম্প্রীতির ছাত্র ঐক্য প্যানেল, ছাত্রদল–সমর্থিত প্যানেল, স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন, সচেতন শিক্ষার্থী সংসদ, সার্বভৌম শিক্ষার্থীর ঐক্য, স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী জোট প্যানেলসহ কেন্দ্রীয় সংসদের ১২টি প্যানেল ও হল সংসদ নির্বাচনের প্রার্থীরা সভায় উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন নির্বাচন কমিশনের সদস্যসচিব এ কে এম আরিফুল হক সিদ্দিকী। সভায় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক আমির মুহাম্মদ নসরুল্লা, মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান চৌধুরী, বেগম ইসমত আরা হক প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন নির্বাচন কমিশনের সদস্যসচিব এ কে এম আরিফুল হক সিদ্দিকী।
শিক্ষার্থীরা যা বললেন
সভায় সার্বভৌম শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেলের সহসভাপতি পদপ্রার্থী তাওসিফ আল মুত্তাকী চৌধুরী প্রশ্ন করেন, পরীক্ষা যদি চাকসু নির্বাচনের আগে হয়, তাহলে ভোটার সংখ্যা কমে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হতে পারে কি না। ভোটারদের যাতায়াতের সমস্যা বা শহরে বুথ দেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করেন পদার্থবিদ্যা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ মুহিদ খান।
দ্রোহ পর্ষদ প্যানেলের সহসভাপতি পদপ্রার্থী ঋজু লক্ষ্মী অবরোধ প্রশ্ন করেন, নির্বাচনের দিন দুই দিন পিছিয়ে দেওয়া সম্ভব কি না। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পদ উল্লেখ করা হলে তা আচরণবিধির লঙ্ঘন হবে কি না।
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের ভোটের জন্য কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বিষয়ে জানতে চান সমাজসেবা ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. শুভ হোসেন। একই সঙ্গে শাটল ট্রেনে রাত ১০টার পর আসা শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনায় নিয়ে প্রচারণার সময় বাড়ানো হবে কি না, তা–ও জানতে চান তিনি। সার্বভৌম শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেলের নির্বাহী সদস্যপ্রার্থী খন্দকার তানভীন কায়েস প্রশ্ন তোলেন, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা কীভাবে অন্য কাউকে ভোট দেওয়ার জন্য বিশ্বাস করতে পারেন।
আগামী ১০ অক্টোবর বিসিএস পরীক্ষা থাকায় অনেকে পরীক্ষা শেষে ভোট দিতে আসতে পারবেন কি না, এমন প্রশ্ন তোলেন চাকসু হল সংসদে প্রীতিলতা হলের প্রার্থী শায়লা আখতার। সম্প্রীতির শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেল থেকে সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে প্রতিদ্বন্দ্বী সাজ্জাদ হোসেন জানতে চান, ভোটের দিন যদি বিদ্যুৎ চলে যায়, তাহলে এলইডি স্ক্রিনসহ অন্যান্য কার্যক্রম চালু রাখার জন্য কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই প্যানেল থেকে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে প্রতিদ্বন্দ্বী সাঈদ বিন হাবিব প্রশ্ন করেন, শ্রেণিকক্ষে প্রচারণা চালানো যাবে কি না।
সর্বজনীন শিক্ষার্থী জোট প্যানেল থেকে সহসভাপতি (ভিপি) পদে প্রতিদ্বন্দ্বী আবির বিন জাবেদ প্রশ্ন করেন, শহরের পুরোনো চারুকলায় বুথ স্থাপন করা হবে কি না এবং নির্বাচনের দিন ক্যাম্পাসে সংগঠনগুলোর কেন্দ্রীয় নেতারা এলে তা আচরণবিধি লঙ্ঘন হিসেবে গণ্য হবে কি না।
ক্লাসরুমে প্রচারণা নয়, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সে ভোট
মতবিনিময় সভায় প্রার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে চাকসু নির্বাচন কমিশনের সদস্য অধ্যাপক আমির মুহাম্মদ নসরুল্লা বলেন, আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কেউ প্রচারণা করলে সেটিকে দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে ধরা হবে না। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী যদি পরিবারের কাউকে সঙ্গে আনতে চান, তবে তাঁকে অনুমতি দেওয়া হবে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের শিক্ষার্থীকে সহায়তা হিসেবে আনার ক্ষেত্রেও অনুমতি থাকবে। নির্বাচনে প্রচারণার জন্য ফেস্টুন ও ব্যানার ব্যবহার করা যাবে না।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনির উদ্দিন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এরই মধ্যে বিশ্বাস জিতে নিয়েছে। ছয় দিন ধরে মনোনয়ন ফরম বিতরণ ও জমা নেওয়ার কাজ অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে সম্পন্ন হয়েছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে সারা বছরই পরীক্ষা চলে, তাই শিক্ষার্থীরা নির্বাচনের মতো বিষয়কেও পড়াশোনার মতো স্বাভাবিকভাবে নিতে পারে। ভোটের দিন ও আগের দিন ক্লাস বন্ধ থাকবে। কিন্তু শিডিউল পরিবর্তন করা হলে ক্ষতি হবে শিক্ষার্থীদেরই। তাই অযথা অভিযোগ তুলে নির্বাচন পেছানোর সুযোগ নেই।’
ক্লাসরুমের ভেতরে কোনো প্রচারণা চালানো যাবে না বলে জানান প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনির উদ্দিন। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে ট্রেনের শিডিউল বাড়ানো হবে। নির্বাচনী কেন্দ্র থেকে ১০০ মিটারের মধ্যে ভোটার ছাড়া অন্য কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দায়িত্বে থাকবে। ভোটের বাক্স আংশিক স্বচ্ছ অর্থাৎ হালকা ঘোলা ধরনের হবে, ভোটার তালিকায় ছবি থাকবে এবং বুথে একজন ভোটার সর্বোচ্চ ১০ মিনিট সময় পাবেন।
খসড়া আচরণবিধিতে মোট ১৭টি বিধি রয়েছে। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বিধির মধ্যে আছে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও দাখিলের সময় কোনো প্রকার মিছিল বা শোভাযাত্রা করা যাবে না। প্রার্থী পাঁচজনের বেশি সমর্থক নিয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দিতে আসতে পারবেন না। কোনো প্রার্থী বা তাঁর পক্ষে মনোনয়নপত্র জমাদান, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার বা নির্বাচনী প্রচারণায় মোটরসাইকেল, রিকশা, ঘোড়ার গাড়ি, হাতি, ব্যান্ড পার্টি ইত্যাদি নিয়ে শোভাযাত্রা বা মিছিল করতে পারবেন না।
আচরণবিধির বিধিমালা ১২–এর খ অনুযায়ী, নির্বাচনী কর্মকর্তা–কর্মচারী, প্রার্থী, পোলিং এজেন্ট ও রিটার্নিং কর্মকর্তা অনুমোদিত ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কেউ ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন না। ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব পাওয়া ব্যক্তিরা তাঁদের নির্ধারিত স্থানে অবস্থান করবেন।
এ বিধি নিয়ে প্রশ্ন তুলে এক শিক্ষার্থী বলেন, ভোটকেন্দ্রে প্রার্থীর প্রবেশ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ভুল–বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছিল। নির্বাচনে অনেকে প্রার্থী হবেন। সবাই ঢুকতে পারবেন কি না, তা নিয়ে ভাবতে হবে। পরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনির উদ্দিন বলেন, প্রার্থীরা ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে পারবেন না। ভোটকেন্দ্রে ১০০ মিটার দূরত্ব পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দ্বারা শুধু ভোটারের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা হবে।