শিরোনামঃ
পিআরের দাবিতে আন্দোলনকারীরা নির্বাচন বিলম্বের চেষ্টায় নেমেছে: মির্জা ফখরুল পাল্টা হামলায় ৫৮ পাক সেনা হত্যার দাবি আফগানিস্তানের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নতুন সচিব এহসানুল হক আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে লাইভ চলাকালে ফেসবুক পেজে সাইবার হামলা: চিফ প্রসিকিউটর শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় যুক্তিতর্ক শুরু ইতালির উদ্দেশে দেশ ছাড়লেন প্রধান উপদেষ্টা একা গিয়ে কী করবো, সেফ এক্সিট নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সেনাবাহিনীর পেশাদারিত্ব রক্ষায় সংশ্লিষ্ট অপরাধের সুষ্ঠু ও নির্মোহ বিচার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ: বিএনপির বিবৃতি আর কোনো সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পরিকল্পনা নেই : প্রেস সচিব পরোয়ানা জারি হওয়া ১৫ সেনা কর্মকর্তা হেফাজতে: সেনাবাহিনী
সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:১৪ পূর্বাহ্ন

লালমনিরহাটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, কুড়িগ্রামে বাড়ছে পানি

লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
প্রকাশ: শুক্রবার, ১৫ আগস্ট, ২০২৫

উজান থেকে হু হু করে ধেয়ে আসা পানির কারণে তিস্তা নদীর ডালিয়া পয়েন্টে টানা তিনদিন ধরে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় লালমনিরহাটের তিস্তাপাড়ে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে।

বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টায় জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজ ডালিয়া পয়েন্টে পানির প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ২৩ মিটার, যা বিপৎসীমার (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ মিটার) ৮ সেন্টিমিটার ওপরে।

নদীপাড়ের মানুষ ও বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, চারদিনের ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে সোমবার (১১ আগস্ট) রাত থেকে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেতে থাকে। মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) দুপুর ১২টায় বিপৎসীমা অতিক্রম করে তা টানা তিনদিন ধরে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে নদীর দুই পাড়ের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে নতুন নতুন এলাকা ডুবে গেছে, পানিবন্দি হয়ে পড়েছে জেলার প্রায় ২৫ হাজার পরিবার।

তিস্তার পানি বাড়ার ফলে লালমনিরহাট সদর, পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ ও আদিতমারী উপজেলার বেশ কিছু এলাকা বন্যাকবলিত হয়েছে। এর মধ্যে পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, দোয়ানী, ছয়আনী, সানিয়াজান, সিঙ্গামারী, সিন্দুর্না, হলদিবাড়ী, ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জের ভোটমারী, শৈলমারী, নোহালী, আদিতমারীর মহিষখোচা, গোবর্দ্ধন, বাহাদুরপাড়া, পলাশী এবং সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, কুলাঘাট, মোগলহাট, রাজপুর, বড়বাড়ী ও গোকুন্ডা ইউনিয়নের নিচু অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

টানা তিনদিনের বন্যায় পানিবন্দি পরিবারগুলো চরম দুর্ভোগে পড়েছে। গবাদিপশু, বৃদ্ধ, শিশু ও প্রতিবন্ধীদের নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তিস্তাপাড়ের মানুষ। চারপাশে শুধু পানি—বাড়ির ভেতরে বিছানার ওপর মাচা বানিয়ে গৃহিণীরা দিনে একবার রান্না করছেন, কেউ কেউ উঁচু রাস্তা বা বাঁধে চুলা বসিয়ে রান্না করছেন। বাঁধ ও রাস্তার ধারে পলিথিনের তাঁবু টাঙিয়ে রাখা হচ্ছে গবাদিপশুগুলোকে। সবচেয়ে বড় বিড়ম্বনায় পড়েছেন নারীরা—পায়খানা ডুবে যাওয়ায় শৌচকর্মে সমস্যা হচ্ছে। প্রায় সব বাড়ির টিউবওয়েল ডুবে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) লালমনিরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী শুনীল কুমার জানান, বৃষ্টি ও উজানের ঢলে তিস্তার পানি বাড়ছে। তিনদিন ধরে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় তিস্তাপাড়ের নিম্নাঞ্চলে বন্যা দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতির উন্নতি হতে কিছুটা সময় লাগবে, তাই সবাইকে সতর্ক থাকতে বলা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) সকালে পানি ১৮ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হলেও সন্ধ্যায় কিছুটা কমে বিপৎসীমার ৮ সেন্টিমিটার ওপরে রয়েছে। আমরা সার্বক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক (ডিসি) এইচএম রকিব হায়দার বলেন, পানিবন্দি পরিবারগুলোর মধ্যে কিছু শুকনো খাবার ও জিআর চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, দ্রুত বিতরণ করা হবে। আরও শুকনো খাবারের জন্য বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখা হচ্ছে।

 

কুড়িগ্রামে বাড়ছে নদ-নদীর পানি, চোখ রাঙাচ্ছে বন্যা

এদিকে,  একের পর এক সম্ভাব্য বন্যার পূর্বাভাস ব্যর্থ হওয়ার পর আবারও কুড়িগ্রামের সব নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। গত দুদিন ধরে ক্রমাগত পানি বেড়ে তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্র নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার দিকে ধাবিত হচ্ছে।

এ অবস্থায় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানিয়েছে, জেলার ধরলা, তিস্তা ও দুধকুমার নদ-নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) বন্যার পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বরাত দিয়ে কুড়িগ্রাম পাউবো এ তথ্য জানায়।

পাউবোর পূর্বাভাস অনুযায়ী, উত্তর-পশ্চিম ও পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন অঞ্চলে লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। ফলে দেশের অভ্যন্তরে রংপুর ও ময়মনসিংহ এবং এর উজানে ভারতে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় (১৪ আগস্ট পর্যন্ত) এসব অঞ্চলসহ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, সিকিম, আসাম, মেঘালয় ও অরুণাচল প্রদেশে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। পরবর্তী দুই থেকে চারদিন মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে।

জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত প্রধান নদ-নদীর উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে আগামী ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমারের পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে এবং ব্রহ্মপুত্রের পানি সতর্কসীমায় পৌঁছাতে পারে। তবে পরবর্তী দিনগুলোতে পানি স্থিতিশীল থেকে হ্রাস পেতে পারে।

পাউবোর নিয়ন্ত্রণকক্ষের তথ্যমতে, বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় দুধকুমার নদের অববাহিকার পাটেশ্বরী গেজ স্টেশনে ৮৯ মিলিমিটার, ব্রহ্মপুত্রের চিলমারী গেজ স্টেশনে ৬৩ মিলিমিটার এবং তিস্তার কাউনিয়া গেজ স্টেশনে ৩৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

বুধবার সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত তিস্তার পানি ক্রমাগত বেড়ে কাউনিয়া গেজ স্টেশনে বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। একই সময়ে দুধকুমার নদের পানি ভূরুঙ্গামারীর পাটেশ্বরী গেজ স্টেশনে বিপৎসীমার ৩৯ সেন্টিমিটার নিচে ছিল। ধরলা ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানিও সমানতালে বাড়ছিল, যদিও সব নদীর পানি তখনও বিপৎসীমার নিচে প্রবাহিত হচ্ছিল।

নদীতীরবর্তী এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নদীর পানি বেড়ে নিম্নাঞ্চলে প্রবেশ শুরু করেছে। তিস্তার পানি বেড়ে যাওয়ায় তীরবর্তী এলাকায় বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে এবং সঙ্গে চলছে ভাঙন। রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ও নাজিমখান এলাকার শতাধিক পরিবার ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। স্থানীয়রা জিওব্যাগ (বালুভর্তি বিশেষ ব্যাগ) ফেলে ভাঙন প্রতিরোধের দাবি জানিয়েছেন।

নাজিমখান ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের হাঁসারপাড় গ্রামে বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষের খনন করা একটি খাল এলাকাবাসীর জন্য বরং বিপরীত পরিস্থিতি তৈরি করেছে। লোকালয় ও কৃষিজমির পানি খাল হয়ে নদীতে পতিত হওয়ার কথা থাকলেও বর্তমানে তিস্তার পানি বেড়ে খালের ভেতর দিয়ে উল্টো প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে ভিটেমাটি ভাঙনের মুখে পড়েছে। স্থানীয়দের দাবি, এতে শতাধিক বাড়ি ও একটি মাদরাসা ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে।

হাঁসারপাড়ের বাসিন্দা অনুকূল ও সুজন বলেন, বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষ খাল কাটার সময় ভেকু দিয়ে খাড়া কাটিং করেছে। আমরা তা করতে নিষেধ করেছিলাম, কিন্তু তারা শোনেনি। এখন তিস্তার পানি বেড়ে খালের ভেতর দিয়ে তীব্র বেগে ঢুকে ভাঙন সৃষ্টি করছে। কিছু জিওব্যাগ না ফেললে যেকোনো সময় আমাদের বাড়িঘর ভেঙে যেতে পারে।

এদিকে ধরলা, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বেড়ে তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে প্রবেশ করছে। নাগেশ্বরী উপজেলায় দুধকুমার তীরবর্তী কেদার ও রায়গঞ্জ ইউনিয়নের কিছু নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকেছে। যদিও এখনও বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়নি, পানি বাড়া অব্যাহত থাকলে এসব অঞ্চল প্লাবিত হতে পারে।

ব্রহ্মপুত্র তীরবর্তী উলিপুরের বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের বাসিন্দা মতিয়ার রহমান বলেন, পানি বাড়ছে, নদের মাঝের কিছু নিচু চরে পানি ঢুকেছে। তবে এখনও বাড়িঘরে পানি ওঠেনি। এমনভাবে বাড়তে থাকলে বন্যা হতে পারে।

পাউবো কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিবুল হাসান বলেন, পানি বাড়ছে, বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। নাজিমখান এলাকায় তিস্তার ভাঙন রোধে আগে ৫০০ জিওব্যাগ দেওয়া হয়েছিল, এখন আরও এক হাজার ব্যাগ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এগুলো দিয়ে কিছুটা ভাঙন ঠেকানো যেতে পারে। আমাদের বরাদ্দ সীমিত।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আব্দুল মতিন বলেন, সম্ভাব্য বন্যা মোকাবিলায় আমাদের সর্বোচ্চ প্রস্তুতি রয়েছে। প্রয়োজনীয় খাদ্যসহ সব সহায়তা উপকরণ মজুদ আছে।

 


এ জাতীয় আরো খবর...