জুলাই আন্দোলনের সময়কার হত্যাচেষ্টার মামলায় অভিনেত্রী শমী কায়সার জামিনে কারামুক্ত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাত ১০টা ৪০ মিনিটে কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তিনি কারামুক্ত হন।
তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন কারা সদর দপ্তরের অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক (অ্যাডিশনাল আইজি প্রিজন্স) মো. জাহাঙ্গীর কবির।
এর আগে গত বছরের ৫ নভেম্বর রাতে উত্তরার বাসা থেকে শমী কায়সারকে আটক করা হয়। পরে তাকে জুলাই আন্দোলনের সময়কার একটি হত্যাচেষ্টায় গ্রেফতার দেখানো হয়। উত্তরা পূর্ব থানার ওই মামলায় নিম্ন আদালতে জামিন না পেয়ে হাইকোর্টে যান শমী কায়সার। পরে গত ১২ মার্চ এই মামলায় জামিন পান তিনি। এর মধ্যে গত ৯ এপ্রিল আজমপুরের এক কলেজ শিক্ষার্থীকে হত্যাচেষ্টার আরেকটি মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখায় আদালত। এ মামলাতেও গত সোমবার জামিন পান এ অভিনেত্রী। তার বিরুদ্ধে অন্য কোনো মামলা না থাকায় তিনি কারামুক্ত হয়েছেন।
এর আগে ১১ আগস্ট তাকে জামিন দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি মোহাম্মদ শওকত আলী চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই জামিন দেন। একইসঙ্গে জামিন প্রশ্নে রুল যথাযথ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট।
আদালতে শমী কায়সারের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী হামিদুল মিসবাহ, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী আনিসুল হাসান। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রেদওয়ান আহমেদ রানজিব ও জিসান হায়দার। রায়ের পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রেদওয়ান আহমেদ রানজিব বলেন, রুল যথাযথ ঘোষণা করে হাইকোর্ট পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল করা পর্যন্ত সময়ের জন্য ওই মামলায় শমী কায়সারকে জামিন দিয়েছেন।
চলতি বছরের গত ৯ই এপ্রিল রাজধানীর উত্তরায় টঙ্গী সরকারি কলেজের অনার্স শিক্ষার্থী জুবায়ের হাসান ইউসুফকে হত্যাচেষ্টা মামলায় শমী কায়সারের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ঢাকার সিএমএম আদালত। গত ১২ই মার্চ হত্যাচেষ্টার অভিযোগে রাজধানীর উত্তরা পূর্ব থানায় করা মামলায় অভিনেত্রী শমী কায়সার জামিন পান। গত বছরের ৫ই নভেম্বর রাতে উত্তরা ৪নং সেক্টরের ৬ নম্বর রোডের ৫৩ নম্বর বাসা থেকে আটক করা হয় শমী কায়সারকে। ওই মামলায় নিম্ন আদালতে জামিন না পেয়ে হাইকোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন করেন শমী কায়সার। এ আবেদনের শুনানি নিয়ে গত বছরের ১০ই ডিসেম্বর হাইকোর্ট রুল দিয়ে তাকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেয়। এ আদেশ স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ১২ই ডিসেম্বর আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত জামিন স্থগিত করে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য নির্ধারণ করে। এরপর আপিল বিভাগ চেম্বার আদালতের দেয়া স্থগিতাদেশ বহাল রেখে হাইকোর্টে এ সংক্রান্ত রুল নিষ্পত্তি করতে সময়সীমা নির্ধারণ করে দেয়। এর ধারাবাহিকতায় রুলের শুনানি শেষে জামিন দিয়ে রুল নিষ্পত্তি করা হয়।
আরও পড়ুন: হত্যাচেষ্টা মামলায় জামিন পেলেন শমী কায়সার
গত ৫ই অগাস্ট সরকার পতনের পর ১৪ই অগাস্ট দেশের ই-কর্মাস প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন ই-কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেন শমী কায়সার। শহীদ বুদ্ধিজীবী শহীদুল্লাহ কায়সার ও লেখক, গবেষক, শিশু সংগঠক, সাবেক সংসদ সদস্য পান্না কায়সার দম্পতির সন্তান শমী কায়সার নব্বই দশকের জনপ্রিয় অভিনেত্রী ছিলেন। পরে তিনি প্রযোজনায়ও নাম লেখান।
শমী অভিনেত্রী হিসেবে পরিচিতি পাওয়ার পর আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার পাশাপাশি দীর্ঘদিন তিনি ই-কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সভাপতি ছিলেন। হয়েছিলেন এফবিসিসিআই’র পরিচালকও। তিনি আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ছিলেন। চলতি বছর দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে ফেনী-৩ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েও পাননি।