কলকাতায় গ্রেপ্তার হওয়া বাংলাদেশি মডেল শান্তা পলের বিরুদ্ধে এবার গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে কলকাতা পুলিশ। গত সোমবার(২৫ জুলাই) দক্ষিণ কলকাতার গল্ফ গ্রিন এলাকার একটি ফ্ল্যাট থেকে শান্তাকে গ্রেপ্তার করে পার্ক স্ট্রিট থানার পুলিশ। প্রাথমিকভাবে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি ভুয়া ভারতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে দেশে অবৈধভাবে অবস্থান করছিলেন। তবে তদন্তে উঠে এসেছে, শান্তা পল শুধু ফেক আধার কার্ড ও ভোটার আইডি বানিয়ে দীর্ঘদিন কলকাতায় অবস্থানই করেননি, বরং মডেলিং ও অভিনয় জগতে সক্রিয়ভাবে কাজ করে প্রচুর অর্থও আয় করেছেন।
এনডিটিভি থেকে জানা যায় পুলিশ জানিয়েছে, শান্তা পলের সোশ্যাল মিডিয়া বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, তিনি ভারতের নানা জায়গা ঘুরে বেড়িয়েছেন এবং ছবি ও ভিডিও পোস্ট করেছেন। বিশেষ করে, তিনি সিকিমের নাথু লা এলাকায় গিয়েছিলেন এবং ভারত-নেপাল-চীন সীমান্তে ভিডিও ধারণ করেছিলেন। এ থেকে পুলিশের সন্দেহ হয়, তিনি হয়তো ভারতের সীমান্তসংক্রান্ত সংবেদনশীল তথ্য সংগ্রহ করছিলেন।
আরও পড়ুন: কলকাতায় গ্রেপ্তার বাংলাদেশি মডেল শান্তা রিমান্ডে
এছাড়া তার সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘আসান ট্রাভেলস কলকাতা অ্যান্ড বাংলাদেশ’ নামে একটি পেজ চালানোর প্রমাণও পাওয়া গেছে, যেখানে তিনি ট্যুরিজম ব্যবসা প্রচার করছিলেন। এমনকি তিনি কোনো রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে হোটেল খোলার পরিকল্পনাও করেছিলেন বলে পুলিশ ধারণা করছে।
তদন্তে আরও জানা যায়, শান্তা দক্ষিণ ভারতের কিছু তামিল সিনেমাতেও পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করেছেন। কলকাতার দক্ষিণ প্রান্তে তার ও তার সঙ্গীর নামে একটি যৌথ মালিকানাধীন সম্পত্তিও রয়েছে। তার সঙ্গী অন্ধ্রপ্রদেশের বাসিন্দা এবং একজন মার্চেন্ট নেভি কর্মকর্তা। কলকাতা পুলিশ এখন খতিয়ে দেখছে, শান্তা মডেল ও অভিনেত্রী হিসেবে কাজ করার সুবাদে ভারতের বিভিন্ন জায়গায় প্রভাবশালী কারো সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন কি না।
তুলনামূলকভাবে আগে গ্রেপ্তার হওয়া ইউটিউবার জ্যোতি মালহোত্রার সঙ্গে শান্তার কার্যক্রমের মিল রয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। উল্লেখ্য, চলতি বছরের মে মাসে ‘ট্রাভেল উইথ জো’ নামে ইউটিউব চ্যানেল চালানো জ্যোতি মালহোত্রাকে ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের প্রেক্ষাপটে অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে পাকিস্তানের আইএসআই-কে গোপন তথ্য পাচারের অভিযোগ ছিল।
এখন কলকাতা পুলিশ চেষ্টা করছে, শান্তা পলও একইভাবে কোনো বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার হয়ে কাজ করছিলেন কিনা, তা উদঘাটনের।তদন্তকারীদের দাবি, বাংলাদেশেও শান্তা একজন পরিচিত মডেল ছিলেন এবং বিভিন্ন পুরস্কার অর্জন করেছিলেন। ভারতীয় ভিসায় এসে তিনি যে নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছেন ও যে কর্মকাণ্ড চালিয়েছেন, তা নিয়ে এখন গোটা ঘটনার গভীরে যেতে চাইছে পুলিশ।